সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৪৭ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, চারঘাট : সীমান্তবর্তী ভারতের কোলঘেঁষা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা। এ সীমান্ত দিয়ে পদ্মা নদী পেরিয়ে চোরাইপথে গরু-মহিষ, ফেনসিডিল, হেরোইন ও ইয়াবাসহ আমদানি নিষিদ্ধ অনেক পণ্য এবং মাদকের অনুপ্রবেশ অনেক পুরনো কথা। কিন্তু করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও ভারতীয় বিএসএফ বাহিনীর কড়াকড়িতে মাদকের অনুপ্রবেশ কম। তাতে স্থানীয় মাদকসেবীদের জোগানে পড়েছে ভাটা।
এ অবস্থায় মাদকের অভাবে নেশা বদল করেছে চারঘাটের মাদকসেবীরা। ইয়াবা, ফেনসিডিল কিংবা হেরোইন নয়- এবার হাতের কাছে ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে ব্যবহার করছে ব্যথা ও স্নায়ু সমস্যাজনিত ব্যথার ট্যাবলেট। এসব ট্যাবলেট উপজেলা ও পৌরশহরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। যা গরীবের ইয়াবা নামে পরিচিতি পেয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট দেখতে কিছুটা ইয়াবার মতো। কিন্তু ইয়াবা ট্যাবলেট নয়, এটা ব্যথা ও স্নায়ু সমস্যাজনিত ব্যথার ওষুধ। এই ট্যাবলেটই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ইয়াবা আর হেরোইনের বিকল্প নেশা হিসেবে। গুঁড়ো করে ইয়াবা আর হেরোইনের মতো সেবন করছে মাদকসেবীরা। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ট্যাপেন্টাডল নামের বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ দেদার বিক্রি হচ্ছে ওষুধের দোকানে।
শুধু অপসোনিনের ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটই নয়, ইনসেপ্টার সেনট্রিডল, হেলথ কেয়ারের সিনটা, এসিআইয়ের লোপেন্ডা, স্কয়ারের পেনটাডল, এসকেএফের টাপেন্ড, বেক্সিমকোর ট্রাপডাসহ বিভিন্ন নামের এসব ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্যাবলেটের মূল্য ২৫-৩০ টাকা হলেও মাদকাসক্তরা ওষুধের দোকান থেকে তা ১১০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ক্রয় করছেন। যদিও এসব ওষুধ বিক্রির সময় ফার্মেসির রসিদ রাখার নিয়ম থাকলেও মানছে না কোনো ফার্মেসি।
উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বিষয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির সাথে মতবিনিময় করে বিনা প্রেসক্রিপশনে এসকল ওষুধ বিক্রি না করতে নিষেধ করেন। তারপরও বিক্রি থেকে নেই। উপজেলা জুড়ে হাত বাড়লেই মিলছেই এসব ট্যাবলেট। অনেক জায়গায় ফোন করলে হোম ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। যার অধিকাংশ ক্রেতা তরুন ও শিক্ষার্থী।
উপজেলা মাদক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, নেশা জাতীয় লোপেন্ডা ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট এখন গরীবের ইয়াবা। ইয়াবার দাম বেশি ও দুস্পাপ্যতা থাকলেও এসব ট্যাবলেট ফার্মেসি থেকে কিনে নেশা করছে। কিছু জায়গায় বাইকে করে হোম ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। মাদকের মত নিষিদ্ধ দ্রব্য না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তেমন ব্যবস্থাও নিচ্ছেনা। তাঁতে তরুণরা শ্রেণী ধীরে ধীরে নেশায় নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে।
নেশা হিসেবে ওষুধ দ্রব্যের আশঙ্কাজনক বিস্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা। এসব ট্যাবলেট সেবনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান জানান, অতিরিক্ত কোনো ওষুুধই শরীরে জন্য ভাল না। নিয়মিত অতিরিক্ত এসকল ট্যাবলেট সেবনকারীর মস্তিস্ক বিকৃতি ও শ্বাস-প্রশ্বাস ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যায়।আমরা ইদানীং এ ধরনের কিছু রোগীও পেয়েছি যারা নেশাগ্রস্ত বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক মাখনুন তাবাসসুম বলেন, লোপেন্ডা, ট্যাপেন্টাডল ধরনের ওষুধ গুলো এখন মাদকের আওতায় পড়ে গেছে এজন্য আমরা বিক্রি বন্ধে ফার্মেসি মালিকদের লিখিত নির্দেশনাও দিয়েছি। তারপরও যদি তারা এগুলো বিক্রি করে তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহী সার্কেল (খ) এর পরিদর্শক লুৎফর রহমান বলেন, সম্প্রতি নেশা জাতীয় কিছু ওষুধের অপব্যবহার মাদকের অন্তভূক্ত করা হয়েছে। তবে আইনপর নির্দিষ্ট কোনো ধারা না থাকায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সমস্যা হচ্ছে। তারপরও আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তৎপর রয়েছি। আজকের তানোর