শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:১৬ pm
করোনা অতিমারী কাটিয়ে শুরু হচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপে অনেক আশা নিয়ে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্নে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে বাছাইপর্বে (১৭ অক্টোবর) স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু শুরু থেকে মূলপর্বের চারটি ম্যাচ ভালো হয়নি বাংলাদেশের। মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও সেখানে এসে কোনোভাবেই যেনো সেই বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোটি কোটি ক্রিকেট প্রিয় দর্শককে হতাশ করেছে। কিন্তু কেন এমন হলো সদ্য নিজের মাঠে বড় বড় দলকে হারানো এই দলের? কোথায় ঘাটতি ছিল? যারা খেলছে তাদের মেধা, দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ তারা ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রমাণ করেছেন।
কিন্তু সেই মেধার সমন্বয় দেখা যায়নি বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে। জিততে গিয়েও মাত্র তিন রানে পরাজয় বরণ করাটা যেন আক্ষেপ আরও বাড়িয়ে দেয়। কেন এইরকম একটি ম্যাচ আমরা জিততে পারিনি। টি-২০ তে তো এই রান হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ এখন একটি টিম যেখানে অনেক প্রতিভা রয়েছে। নিজেদের সামর্থ্য দিয়ে খেলতে পারলে এবং নিজেদের প্রকৃত রুপ দেখাতে পারলে অবশ্যই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অনেকদূর যাওয়ার কথা ছিল। তবে তা হয়নি। ব্যাটিংটা সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে। লড়াই করার মতো রান বেশি করা যায়নি। এই তো মাত্র কিছুদিন আগেই বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি টিম অষ্ট্রেলিয়াকে ধরাশায়ী করেছে আমাদের টাইগার বাহিনী। বাঙালি ক্রিকেটপ্রিয় জাতি। অবশ্য ক্রিকেটের আগে বাংলাদেশে বহু রকরেম খেলার প্রচলন ছিল।
সেসব গ্রামীণ খেলাধূলা এখন হারিয়ে গেছে। ফুটবলও তার জৌলুস হারিয়েছে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। নেপালের সাথে ড্র না হলে অন্য রকম কিছু ঘটতে পারতো। যে কোনো খেলাতেই বাংলাদেশ ভালো খেললে আমরা উচ্ছসিত হই। আমরা আসলে ক্রিকেটপ্রিয় না খেলাধূলাপ্রিয় জাতি। বাঙালি ভালো খেললেই আমরা আবেগে ভাসি। হাততালি দেই। তাদের উৎসাহ যোগাই। যেহেতু ক্রিকেট এখন এই উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা বিশেষ করে ভারত পাকিস্থান ও বাংলাদেশে তাই এই খেলা ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনাও থাকে বেশি। মাঠেÑঘাটে এখন ছোট ছোট শিশুদেরও ব্যাট-বল হাতে দৌড়াতে দেখা যায়। এর কারণ এই খেলার জনপ্রিয়তা। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে একসময় এ দেশের ছেলে মেয়েরা অন্যদেশের ক্রিকেটারদের মতো খেলতে চাইতো।
বোলিং বা ব্যাটিং তাদের মতো করতে চাইতো। আজ কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেছে। আজ বিদেশী খেলোয়াড় নয় বরং বাংলাদেশের কোনা সাকিব বা মাশরাফির মতো খেলতে চায়। কারণ বিশ্বজুড়েই এরা আইডল। তাই অযথা কেন বিদেশী খেলোয়াড়ের মতো হতে চাইবে এদেশের দামাল ছেলেরা? গর্ব করার মতো সবই তো আছে। তাদের খেলা আমাদের মুখে হাসি এনে দেয়। বাংলাদেশে এখন রয়েছে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। যাদের ওপর আস্থা রাখা যায়। একটি দল হয়ে ওঠা সহজ কথা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো খেলায় একজন বিশেষ খেলোয়াড়ের নৈপূণ্যই বেশি প্রভাব ফেলে। সে যেদিন ভালো খেলে সেদিন দল জয়লাভ করে। আজ আমাদের এমন বিষয় নেই। আজ একজন না থাকলেও বিকল্পের কাছেও ভালো খেলার প্রত্যাশা করতে পারি। কারণ আমাদের খেলোয়াড়রা সবাই দক্ষ এবং দলকে জয় এনে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো ক্রিকেট। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের প্রতিটি অধ্যায় এদেশের মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। প্রতিটি বিশ্ব শক্তির বিরুদ্ধে জয়ের এক একটা ইতিহাস আমাদের মনে আছে। ফুটবলের আলো এদেশে বহুবছর ম্রয়িমান। তবে ক্রিকেটটা গত কয়েক বছর ধরেই অধিক উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছে। বাঘা বাঘা সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করেছে আমাদের টাইগারা। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশের মানুষের আনন্দের একটি বড় উৎস হলো ক্রিকেট। আমরা ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করি, ক্রিকেটারদের নিয়ে ভাবি,ক্রিকেট নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নের কথা আজ না বলি।
ক্রিকেট আমাদের কাছে আবেগ। আর ক্রিকেটের অগ্রভাগে থেকে যে লড়াকু সৈনিকরা ক্রিকেটকে আজকের অবস্থায় এনেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সাকিব, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম,মুশফিকুর,মুস্তাফিজ,লিটন,সৌম্য, তাসকিন, মিরাজ এবং এই দুরন্ত খেলোয়াড়দের সাথে যোগ হয়েছে একঝাঁক মেধাবী তরুণ খেলোয়াড় যারা নিজেদের প্রমাণ করেছে। বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচ খুব একটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। তারপর থেকে বাংলাদেশের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। তবে দর্শক বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের পাশে আছে। আমরা হতাশ তবে আস্থা হারাইনি। কিন্তু কেন এমন হলো তা খুঁজে বের করা দরকার।
বিদেশের মাটিতে এর আগেও বহু ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ভালো খেলেছে। প্রতিযোগীতামূলক খেলা হয়েছে। ব্যাটিংও ভালো হয়েছে। এখন যেমন ব্যাটিংয়ে দুর্দশা, ফিল্ডিংয়ে দুর্দশা আর রান কম হলে বোলিংয়ের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। তবে আশা করা যায় দ্রুতই তারা ঘুরে দাড়াবে। বিশ্বকাপে খারাপ হলো কিন্তু এরপর আরও ম্যাচ আছে। বাংলাদেশ অবশ্যই ফিরবে। তাদের জন্যই আমাদের আজকের ক্রিকেট বিশ্ব প্রতিযোগীতায় সগর্বে অবস্থান করছে। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে অর্জন তা যেন গোটা বিশ্ব দেখছে। সমন্বিত নৈপূণ্যে বাংলাদেশ দল আজ কোথায় পৌছে যাচ্ছে তা যেন কোন সীমায় বাধা যায় না।
বিগত দুই বিশ্বকাপেই আমাদের দেশ ভালো খেলেছে। আমরা সেই খেলা দেখে আনন্দিত হয়েছি। বিশ্বকাপ আমাদের কাছে একটি স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন দারুণভাবে ব্যাহত হলো। এই বিশ্বাস থেকেই আমরা সবসময় আমাদের ক্রিকেটাদের পাশে থাকি, তাদের উৎসাহ দেই অনুপ্রেরণা দেই। আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে অবস্থায় দাড়িয়ে সেখানে বিভিন্ন সময়ের ক্রিকেটাররা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দলীয় প্রচেষ্টা ছাড়া বিজয় অর্জন করা যায় না। বাংলাদেশ একটি দল হয়ে উঠতে পারেনি বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে।
দল জয় লাভ করলে আমরা দারুণ উচ্ছসিত হই আবার দল হারলে আমাদের চোখেও জল আসে। আমরা ব্যথিত হই। এটা আমরা করি কারণ আমরা যেমন ক্রিকেটকে ভালোবাসি তেমনি ক্রিকেটারদেরও ভালোবাসি। সামর্থ্যরে বেশিও হয়তো মাঝে মাঝে আমরা আশা করি! এটাও ভালোবাসার দাবি থেকেই। তাই সেই আশা যখন অনেক বেশি অপূরণ থাকে তাহলে খারাপ লাগাটাও স্বাভাবিক। তাই এমন পরপর পরাজয়ে আমাদের মন বিষন্ন করে তুলছে। তবে পাশে আছি। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে।
ধারাবাহিকতা বজায় রাখ একটি ভালো দলের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। উইকেটে টিকে থাকার মানসিক শক্তি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই শক্তির কোথায় যেন ঘাটতি রয়েছে বলে মনে হয়। একটি বড় স্কোর করার সক্ষমতা এবং ম্যাচ বের করে নিয়ে যাওয়ার মতো পাওয়ার হিটার যার খেলা পরের খেলোয়াড়দের খেলা সহজ করে দেয় তেমন খেলোয়াড় দরকার। শুরুতেই উইকেট হারালে পরবর্তীতে রান তোলা বেশ কষ্টসাধ্য হয়। আমাদের দেশের ক্রিকেট অনেক উন্নতি করেছে। তবে বিশ্বকাপটা খারাপ গেলো।
সারা বিশ্বই বাংলাদেশকে সমীহের চোখে দেখে। জয় পরাজয় একটি খেলার জাতগত বিষয়। এবার হয়নি কিন্তু আশা করি বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে একদিন এই উচ্ছাস হবে। আমরা আমাদের ক্রিকেট দল ভালোবাসি। তারা কোনো এক সময় খারাপ খেলতে পারে। তবে ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে বেরিয়ে এসে আত্নবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। সাংবাদিক ও কলামিষ্ট