মঙ্গবার, ০৩ িসেম্র ২০২৪, সময় : ১১:০৯ pm
আজকের তানোর বিনোদন ডেস্ক :
শোবিজে অনেকেই আসেন চমক নিয়ে। ঝলসে দেন অভিষেকেই। বেশ কিছুদিন তারকাখ্যাতির আলোয় মাতিয়ে রাখেন চারদিক। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা হারিয়ে যান। কোনো খবরেই আর তাদের পাওয়া যায় না। ফিরে ফিরে আসেন স্মৃতিচারণে। এমন অনেক নজির রয়েছে সারা বিশ্বের রুপালি জগতেই। বলিউডের আঙ্গিনায় তেমনি একজন ঋতু শিবপুরী। স্টারকিড হওয়া সত্ত্বেও অকালে হারিয়ে গিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রি থেকে। অনেকেই এর অনেক কারণ খুঁজে পান। তবে আনন্দবাজার ডিজিটাল এক ফটোফিচারে দাবি করেছে, বিভিন্ন নায়কদের সঙ্গে প্রেম করে তাদের কাছে প্রতারিত হন ঋতু। সেই প্রতারণা থেকেই জন্ম নেয় হতাশা।
আর হতাশা তাকে ছিটকে ফেলে শোবিজ থেকে। দোষ ছিলো তার নাক উঁচু স্বভাবেরও। ঋতুর বাবা ওম শিবপুরী বলিউডের প্রথমসারির খলনায়ক। অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খন্নার ছবিতে তিনি পরিচিত মুখ। ‘ডন’, ‘দ্য বার্নিং ট্রেন’, ‘নসীব’-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকস্মৃতিতে উজ্জ্বল। ঋতুর মা সুধা শিবপুরী আইকনিক হয়ে আছেন ‘কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি’ ধারাবাহিকে ‘বা’-এর চরিত্রে অভিনয় করে। ওম এবং সুধা দু’জনেই ছিলেন ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা’-র পড়ুয়া। দশ বছরের প্রেমপর্বের পরে দু’জনে বাড়ির অমতে বিয়ে করেন। বাড়ির অমতের কারণ ওম ছিলেন কাশ্মীরি প-িত পরিবারের এবং সুধা রাজপুত বংশের।
ঋতুর যখন ১ বছর বয়স, কর্মসূত্রে ওম এবং সুধা পাকাপাকিভাবে মুম্বাইয়ে (তখন বম্বে) থাকতে শুরু করেন। ছোটবেলা থেকে ফিল্মি আবহে বড় হয়ে ওঠা ঋতু অন্য কোনও কেরিয়ারের কথা ভাবেননি পরে। তিনিও সামিল হন মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতেই। ঋতুকে বলিউডে লঞ্চ করেছিলেন পহেলাজ নিহালনী। সে সময়কার সুপারস্টার গোবিন্দর বিপরীতে। তবে মেয়ের সাফল্য দেখে যেতে পারেননি ওম। ঋতুর প্রথম ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই তিনি মারা যান। এরপর সুধা আরও বেশি করে অভিনয় করতে শুরু করেন। ঋতুর প্রথম ছবি ‘আঁখেঁ’ বক্সঅফিসে সুপারডুপার হিট হয়েছিল। তারা ছাড়াও ছবিতে আরও দুই নায়িকা ছিলেন। শিল্পা শিরোদকর এবং রাগেশ্বরী। তাদের মাঝে ঋতুও দর্শকদের নজর কাড়তে পেরেছিলেন। বলিউডের সফলতম ছবিগুলির মধ্যে ‘আঁখেঁ’ অন্যতম। নয়ের দশকের গোড়ায় সে সময় ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকাদের কোঁকড়া চুল ট্রেন্ডি ছিল। মাধুরী, জুহি, কারিশমা- সকলে কার্লি হেয়ারস্টাইলেই নিজেদের সাজাতে ভালবাসতেন। ঋতুর হেয়ারস্টাইলও ছিল সময়ের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়েই। প্রথম সিনেমার গানও তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। ঋতুর পরিচয় হয়ে গিয়েছিল ‘লাল দুপট্টেওয়ালি’।
এরপর কমল সদানার সঙ্গে ‘হম সব চোর হ্যায়’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এই ছবির গানও ছিল আইকনিক। শোনা যায়, এই ছবিতে অভিনয়ের সময় ঋতুর প্রেমে পড়েছিলেন কমল। তার আগে তার সম্পর্ক ছিল রাবিনা টন্ডনের সঙ্গে। ঋতুর জন্যই নাকি তিনি সরে এসেছিলেন রাবিনার কাছ থেকে। পরে রাবিনা অজয় দেবগণের ঘনিষ্ঠ হন। একে স্টারকিড, তার উপর সূত্রপাতেই জনপ্রিয়তা। ঋতুর কাছে ছবির সুযোগ আসতে দেরি হয়নি। তবে খুব বেশি ছবিতে অভিনয় করতেন না ঋতু। ছবি নিতেন বেছে বেছে। বাকি নায়িকা যেখানে সেকেন্ড লিডেও অভিনয় করতেন, সেখানে ঋতু চাইতেন বাছাই চরিত্র। ছবির পাশাপাশি সম্পর্কের কারণেও খবরে থাকতেন ঋতু। কমল সদানার পরে ফারদিন খানের সঙ্গেও তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে শোনা যায়। তবে ঋতু বারবার প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন বলেই ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলে গুঞ্জন। প্রত্যাখ্যান এসেছে অভিনয়ের দিক দিয়েও। সে সময় বলিউডের বেশিরভাগ নায়ক তাদের কোনো না কোনো নায়িকার সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন। ঋতু পরে অভিযোগ করেন, ছবির সুযোগ এসেও চলে গিয়েছে তার কাছ থেকে। কারণ নায়ক হয়তো তার নিজের বান্ধবীকে চাইছেন ছবিতেও।
পরে বারবার সাক্ষাৎকারে ঋতু আক্ষেপ করেছেন, কেন সে সময় কোনো তারকার সঙ্গে তিনি ডেট করেননি। সালমান, অক্ষয়, অজয়ের মতো কোনো তারকা যদি তার বয়ফ্রেন্ড হতেন, এভাবে তাকে হারিয়ে যেতে হত না। আক্ষেপ ঋতুর। একাধিকবার কাস্টিং কাউচেরও মুখোমুখি হন তিনি। অশালীন প্রস্তাবে রাজি হননি বলেও অনেক ছবির সুযোগ হাতছাড়া হয় বলে অভিযোগ এই নায়িকার। তবে এ সবের বাইরে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকার জন্য চেষ্টা তিনি করেছেন। সময়ের তুলনায় এগিয়ে থাকা ঋতু পর্দায় যথেষ্ট সাহসীও ছিলেন। পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য তার এবং অক্ষয়কুমারের টপলেস ফোটোশুট ছিল সেই সময়ে তীব্র বিতর্কিত ঘটনা। ‘লজ্জা’, ‘হদ কর দি আপনে’, ‘শক্তি দ্য পাওয়ার’-এর মতো কিছু ছবিতে ঋতুকে দেখা গিয়েছিল পার্শ্বচরিত্রে। কিন্তু তার পর ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে যান তিনি।
সিনেমায় সুযোগ না পেয়ে টিভিতে অভিনয়েরও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেখানেও বেশি সুযোগ পাননি। শেষে এমন পরিস্থিতি হয়, বড় এবং ছোট পর্দা, কোথাও কাজের সুযোগ নেই ঋতুর। কিন্তু তার মা তখন টেলিভিশনের ব্যস্ত নায়িকা। অভিনয় করছেন ‘কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি’ ধারাবাহিকে, ‘বা’-এর চরিত্রে। পুরনো সব কাজ ভুলে গিয়ে সুধাকে দর্শক মনে রেখেছেন এই একটিমাত্র চরিত্রের জন্য। বিয়ে করেছিলেন ব্যবসায়ী হরি ভেঙ্কটকে। বিয়ের পরে স্বামী এবং যমজ সন্তানের সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ঋতু। বহু দূরে চলে যান গ্ল্যামারদুনিয়া থেকে।
বলিউডের ‘বিস্মৃত অভিনেত্রী’-দের মধ্যে আলোচিত হয় তার নাম। দীর্ঘ সময়ের পরে ঋতু বলিউডে কামব্যাক করেন অনিল কাপুরের ছবি ‘২৪’-এ অভিনয় করে। পাশাপাশি, বেশ কিছু টিভি ধারাবাহিকেও তাকে দেখা গিয়েছিল। ‘ইস প্যায়ার কো ম্যায়ঁ ক্যায়া নাম দুঁ’ ধারাবাহিকে তিনি অভিনয় করেছিলেন।
সূত্র : এফএনএস