শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:০০ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, গোদাগাড়ী : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি বর্তমান চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তার। তাই আওয়ামী লীগের এই নেতা এবার তার ভাতিজাকে দিয়ে ‘বিদ্রোহ’ করাচ্ছেন। নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে ভাতিজাকে প্রার্থী করে ভোটের মাঠে নামিয়েছেন তিনি।
নৌকা মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করাতে নিজের অনুসারীদের দিয়ে পেছন থেকে ‘কলকাঠি’ নাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তারের ভাতিজার নাম মাসুদ ইকবাল। মাসুদকেই নৌকা মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তার। মাসুদের বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ইসলাম বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তারের আপন ভাই।
আর বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদের সমর্থনকারী হয়েছেন আক্তারের আরেক ভাতিজা নাহিদ আহসান। তিনি দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে মাস্টাররোলে চাকরি করেন। নাহিদ আহসানও বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তারের আরেক ভাই মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে। টানা তিনবার এই ইউপির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এবার নৌকা না পেয়ে তিনি তার আপন ভাতিজাকে প্রার্থী করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভাতিজার পক্ষে কাজ করায় অবিলম্বে চেয়ারম্যান আক্তারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তারের সঙ্গে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। এমপি ফারুক এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এমপি ফারুক বিরোধী হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাকর্মী চেয়ারম্যান আক্তারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
ফলে এবার মনোনয়ন চেয়েও তিনি পাননি। মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন সোহেল। করোনাকালে তিনি ইউনিয়নবাসীর পাশে থেকে জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব ধরে রাখার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান তার ভাতিজা মাসুদ ইকবালকে প্রার্থী করেছেন। অথচ ইউনিয়নবাসী তাকে ঠিকমতো চেনেনই না। এমনকি তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ও নন।
আওয়ামী লীগের নেতা হয়েও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। গত শনিবার উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম দেওপাড়া ইউপি নির্বাচনের এক নির্বাচনী সভায় চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমরা তো আপনার জন্যও অনেক করেছি। এখন কেন নৌকার বিরোধিতা? নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান না নিয়ে সমর্থন করুন। এলাকার উন্নয়নকে এগিয়ে নেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর আশীর্বাদ রয়েছে। আমি ইউনিয়নবাসীর পাশে রয়েছি। বিরোধিতা করে লাভ হবে না। ইনশাল্লাহ নৌকার বিজয় হবে।
বক্তব্যের জন্য বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে ভাতিজাকে প্রার্থী করা এবং তার পক্ষে মাঠে নামার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ঝামেলার মধ্যে আছি। এ ব্যাপারে পরে কথা বলব। এরপরেই তিনি ফোন বিচ্ছিন্ন করে দেন।
তবে চেয়ারম্যান আক্তারের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ বলেন, নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে আক্তারের অবস্থানের বিষয়ে নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত অভিযোগ করছেন। আক্তার তার ভাতিজা মাসুদ ইকবালকে প্রার্থী করে দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার বিষয়টি তদন্ত করা হবে। আক্তার যেহেতু জেলার নেতা, তাই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা কমিটির কাছে সুপারিশ করা হবে। আজকের তানোর