শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:০৭ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ চারদিকে। দলীয় নেতাকর্মীসহ বঞ্চিত প্রার্থীদের এসব অভিযোগ যেমন এলাকার সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে, তেমনি মনোনয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও।
চলমান ক্ষোভ বিক্ষোভের মধ্যে গত রোববার রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে।
মোহনপুর উপজেলার রায়ঘাটি ইউনিয়নে মনোনয়নবঞ্চিত সুরঞ্জিত সরকারের সঙ্গে এমপি আয়েনের কথোপকথনের ২ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের অডিওটিতে দলীয় মনোনয়নের গোমর ফাঁস হয়েছে।
সুরঞ্জিত সরকার মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
সুরঞ্জিত সরকার ফোনে এমপি আয়েনকে বলছেন, ‘ভাই রাগ কইরেন না। এক মিনিট আমার কথা শোনেন’। এমপি আয়েন উত্তরে বলছেন, ‘না না। আমার কিছু করার নেই। কামাল ভাই (এসএম কামাল) সরাসরি রায়ঘাটি ও বড়গাছিতে প্রার্থী দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের মৌখিক নির্দেশনায় করেছি। আপনি পারলে তার সঙ্গে কথা বলেন। আমি দুদু ভাইকে বলে দিয়েছি। আমি কিছু করতে পারব না’।
সুরঞ্জিত বলতে থাকেন, ‘আপনি যদি একটু ভূমিকা নেন, তা হলে আমি ভোট করতে পারি ভাই’। জবাবে এমপি আয়েন বলেন, ‘আমি কোনো ভূমিকা নেব না তো। আমি তো বলেছি’।
সুরঞ্জিত বলেন, ‘ভাই আমাকে ডেকে বলতেন। আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি’। এমপি আয়েন বলেন, ‘শালা তোদের মতো ক্রিমিনাল আর একটিও নাই। শুয়োরের বাচ্চা তোর এত বড় সাহস তুই এমপির বিরোধিতা করছিস। মেরাজ মোল্লা (জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি) তোর বাপ ছিল, শালা ১৫ আগস্ট করত না’।
সুরঞ্জিত বলতে থাকেন, ‘ভাই আমাকে একটিবার সুযোগ দেন। আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি’। এমপি আয়েন জবাবে আরও বলেন, ‘না না না। হিন্দুরা তোকে দেখতে পারে না। তোর কোনো কথা আমি শুনব না। আমি কিছু করতে পারব না। তুই নৌকার জন্য কাজ কর, ভালো চাহিস তো’।
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামালের নির্দেশে রায়ঘাটি ও বড়গাছিতে নির্দিষ্ট প্রার্থীর নাম পাঠানোর বিষয়ে বলা তার কথোপকথনের বিষয়ে জানতে চাইলে আয়েন উদ্দিন এমপি সোমবার দুপুরে বলেন, আমি কার সঙ্গে কী কথা বলেছি এখন মনে নেই। প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্র। আমি কোনো প্রার্থীর জন্য কাউকে কিছু বলিনি।
সুরঞ্জিত সরকার রোববার রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০১৬ সালে তাকে মনোনয়ন দিয়েছিল দল। ইউনিয়ন সভাপতি খলিলুর রহমান তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ভোট করেছিলেন। এবার খলিল নিজে প্রার্থী না হয়ে তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে বাবুল হোসেনকে প্রার্থী করেন। মনোনয়ন যে আওয়ামী লীগ বা সহযোগী কোনো সংগঠনের কর্মী বা সদস্য নন।
তার আরও অভিযোগ, উপজেলা ও জেলা থেকে রায়ঘাটি ইউপিতে প্রার্থীদের নামের তালিকায় বাবুল হোসেনের নাম এক নম্বরে রাখা হয়েছিল। আর তার নাম রাখা হয়েছিল শেষে। এসবই মনোনয়ন বাণিজ্যের অংশ হিসেবে করা হয়।
সুরঞ্জিত কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি রাজনৈতিক কারণে তিনবার জেল খেটেছি। এলাকার এমপিসহ নেতারা দলের সঙ্গে সম্পর্কহীন ২৫ বছরের এক যুবককে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন শুধু টাকার জন্য।
অন্যদিকে রাজশাহীর পবা বড়গাছি ইউপিতে ২০১৬ সালে নৌকা পেয়েছিলেন মোবারক হোসেন। তবে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি এমদাদুল হক বিদ্রোহী হয়ে ভোট করেছিলেন। পরাজিত হয়েছিলেন দুজনই।
এবার এমদাদ নিজে মনোনয়ন পাবেন না জেনে ছেলে শাহাদাৎ হোসেন সাগরকে প্রার্থী করেন। সাগর দলের মনোনয়ন পান।
পবা ও মোহনপুর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, রায়ঘাটিতে বিদ্রোহী খলিলের ছেলে বাবুল ও বড়গাছিতে বিদ্রোহী এমদাদের ছেলে এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। এমপি আয়েনের অতি ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কৌশলে দুই বিদ্রোহীর ছেলেকে তদবির করে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শুধু এ দুই ইউনিয়নই নয়, পবার হড়গ্রাম ইউনিয়নে মনোনয়ন পাওয়া ফারুক হোসেনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রোববার এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মনোনয়নপ্রাপ্ত ফারুক হোসেন আগে জামায়াত করতেন বলেও অভিযোগ করা হয় সমাবেশে। তার মনোনয়ন বাতিল না হলে নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে ভোট বর্জন করবেন বলেও ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, পবা ও মোহনপুরের ১৪ ইউনিয়নে ভোট ২৮ নভেম্বর।
https://youtu.be/Kanx3p4UX4s