রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৫৮ am
শহিদুল ইসলাম, (নিজস্ব প্রতিবেদক) নাচোল : আগামী ২ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্রিটিশ আমলের মিউনিসিপালিটিগুলির একটি। আয়তন ও জনসংখ্যার নিরিখে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৯৭ জন। উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধায় পিছিয়ে থাকা একটি পৌরসভা।
১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম সনি মিয়া তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর বিগত ৪৭ বছরেও এই পৌরসভায় দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের কোনো চেয়ারম্যান অথবা মেয়র প্রার্থী জয়ী হয়নি।
এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোখলেসুর রহমান জয়ের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলেছেন। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী মোখলেসুর রহমানের সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতায় বিপুল ভোটে জয়ের আশা দেখছেন নেতাকর্মীরা।
জামায়াত প্রভাবিত বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার এবারের নির্বাচনে চারজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের মোখলেসুর রহমান নৌকা, বিএনপি সমর্থিত নজরুল ইসলাম নারিকেল গাছ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল জগ ও জেলা যুবলীগের সভাপতি সামিউল হক লিটন মোবাইল ফোন প্রতীকে ভোট করছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর শহর।
দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকার প্রার্থী মোখলেসুর রহমান গত কয়েক বছরে ব্যাপক সেবামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পৌরবাসীর কাছে যেমন পরিচিতি পেয়েছেন তেমনি উদারপন্থী মানসিকতার কারণে নিজের দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের কাছেও গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তি তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। বিশেষ করে করোনা শুরুর পর থেকে পৌরসভার প্রতিটি এলাকাতেই ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে।
মোখলেসুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জকে বাস্তবিক অর্থে আধুনিক পৌরসভায় রূপান্তরের অঙ্গীকার করছেন পৌরবাসীর কাছে। তার দাবি তিনি ভোটারদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাচ্ছেন। বিপুল ভোটে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
জেলা যুবলীগের সভাপতি সামিউল হক লিটন এবার বিদ্রোহী হয়ে ভোট করছেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে ৩০ হাজার ৫০৪ ভোট পান। পরাজিত হয়েছিলেন এক হাজার ভোটের ব্যবধানে। এবার বিদ্রোহী হলেও দলের একটি অংশ লিটনের পক্ষে কাজ করছেন। তার দাবি, দল তাকে মনোনয়ন না দিলেও জনগণের সমর্থন পাচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে আছেন। এ জন্য তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
গত নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত আতাউর রহমান পেয়েছিলেন ২১ হাজার ৪২৭ ভোট। এবার বিএনপি দলীয়ভাবে ভোট না করলেও অঘোষিতভাবে তারা প্রার্থী দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে।
গত মঙ্গলবার বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ নজরুল ইসলামের নারিকেল গাছ প্রতীক আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করেন। নজরুল ইসলামের পক্ষে হারুন এমপিসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভোট প্রচারে নেমেছেন। বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণার শ্লোগান হচ্ছে ‘হারুন ভাইয়ের সালাম নিন, নারিকেল গাছ প্রতীকে ভোট দিন’।
জামায়াত প্রভাবিত এ পৌরসভায় গত নির্বাচনে জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ৩১ হাজার ৫০৪ ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। এবার নজরুল ইসলাম প্রার্থী হননি। এবার জামায়াতের কোনো প্রার্থী না থাকলেও সাবেক শিবির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল জগ প্রতীকে ভোট করছেন। তবে জামায়াতের নেতাকর্মীরা চিরাচরিতভাবে যেভাবে দলবেঁধে প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন- এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না।
মুকুলের দাবি, গত নির্বাচনেও জামায়াত দলীয়ভাবে ভোট করেনি। তবুও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা জামায়াতের দখলেই ছিল। তাদের ভোট রিজার্ভ। তিনি দলের ও সাধারণ মানুষের ভোটে মেয়র হবেন বলে আশাবাদী।
পৌরসভার শিবতলা মহল্লার ভোটার শরিফুল হক বলেন, এবারে লিটন ছাড়া বাকি তিনজন প্রার্থী নতুন। আবার মোখলেসুর রহমান ছাড়া বাকি তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে পিছিয়ে পড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি দলের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন বলে ঠিক করেছেন।
মঞ্জুর রহমান নামের আরেক ভোটার বলেন, তিনি দল করেন। তাই নৌকা প্রতীকেই ভোট দেবেন। নৌকার প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ অন্যদের তুলনায় স্বচ্ছ। এবারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন অনেক ভোটার।
নৌকার প্রার্থীর অবস্থান খুবই ভালো দাবি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস বলেন, আমরা এবার জয়ের স্বপ্ন দেখছি। ভালো প্রার্থীর পাশাপাশি জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে পৌরবাসী দলমত নির্বিশেষে এবার নৌকার প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন বলে তিনি আশাবাদী। আজকের তানোর