বৃহস্পতিবর, ১৯ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:০৫ am

সংবাদ শিরোনাম ::
পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ বাংলাদেশ ও ভারত ভিসা জটিলতায় চার যৌথ সিনেমা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক বৈরী আবহাওয়ার অজুহাতে বিদ্যুতের লোডশেডিং, অসহায় মানুষ বাগমারায় সাবেক এমপি এনামুল হক গ্রেফতার বাগমারায় মোমবাতির আগুনে ব্যবসায়ীর দোকান ও বসতবাড়ি পুড়ে ছাঁই মোহনপুরে চুরির মালামাল উদ্ধার, ১২ ঘন্টা পর চোর আটক মোহনপুরে ঈদে মিলাদুননবী (সা:) পালিত রাজশাহীতে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপিত
সম্প্রীতি, মানবতা ও উদারতার শিক্ষা দিয়েছেন মহানবি (সা.)

সম্প্রীতি, মানবতা ও উদারতার শিক্ষা দিয়েছেন মহানবি (সা.)

যখন পুরো পৃথিবী নিকষ আঁধারে ছেয়ে ছিল, শিরিকমুক্তভাবে আল্লাহতায়ালার ইবাদত করার মতো কেউ ছিল না পৃথিবীতে, ঠিক তখনই মানবজাতিকে অন্ধকারের ঘোর অমানিশা থেকে আলোর মিনারায় স্থানান্তরিত করার জন্য সর্বপুণ্যময় ভূমি মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন নবিজি মুহাম্মাদ (সা.)।

৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট ১২ রবিউল আউয়াল মতান্তরে ৮ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় ধরাধামে এলেন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)।

রাসূলের (সা.) মায়ের নাম আমিনা, বাবার নাম আবদুল্লাহ্, দাদার নাম আবদুল মুত্তালিব। দাদা নাম রাখেন ‘মুহাম্মাদ’। মা আমেনা তাঁর নাম রাখেন ‘আহমদ’। নাম দুটির অর্থ যথাক্রমে ‘প্রশংসিত’ ও ‘সর্বাধিক প্রশংসিত’।

আল্লাহ তাঁকে অনুপম চরিত্র মাধুরী দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। চারিত্রিক সৌন্দর্যেও তিনি ছিলেন সৃষ্টির সেরা। আল্লাহ তাঁর চরিত্রের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী’ (সূরা আল কালাম-৪)।

আল্লাহতায়ালা প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদকে (সা.) মানবসমাজের হেদায়াতের আলোকবর্তিকা হিসাবে পৃথিবীর বুকে পাঠিয়েছেন। তিনি পৃথিবীর বুকে এমন এক সভ্যতা স্থাপন করেছেন, যা চিরসুন্দর, চিরসবুজ এবং সমুজ্জ্বল আলোকধারায় উদ্ভাসিত। তিনি বর্বরতার অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়া আরবের মানুষকে সোনালি সময় এবং নতুন জীবন দান করেছেন। মানব গোলামির জিঞ্জির ভেঙে একনিষ্ঠ ইবাদতের সুযোগ করে দিয়েছেন।

মানবজাতির জন্য প্রিয় রাসূলের (সা.) শুভাগমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। আল্লাহতায়ালা তাঁকে রাহমাতুল্লিল আলামিন হিসাবে শ্রেষ্ঠ নবির মর্যাদা দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং তাঁর মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে রাসূল প্রেরণের ধারাবাহিকতা। পবিত্র কুরআন মজিদে প্রায় দশটি সূরার মধ্যে রাসূলের (সা.) শুভাগমন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যেমন-আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মানবজাতি! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে (বোরহান) অকাট্য প্রমাণ এসেছে, আর আমি সমুজ্জ্বল আলোকময় নূর (আল কুরআন) পাঠালাম (সূরা আন নিসা-৪১)। তাফসিরে কবীর, তাফসিরে রূহুল বয়ান ইত্যাদি তাফসির গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, ‘বোরহান’ বা অকাট্য প্রমাণ বলে নবিজিকে (সা.) বোঝানো হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, (হে হাবীব) আমি আপনাকে জগৎসমূহের প্রতি একমাত্র রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি (সূরা আম্বিয়া-১০৭)।

প্রিয় রাসূলের (সা.) শুভাগমন সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এসেছে এবং সুস্পষ্ট কিতাব (সূরা মায়েদা-১৫)। বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা নাসির উদ্দিন বাইজাভী (রহ.) তাঁর তাফসিরে উল্লেখ করেছেন, এখানে ‘নূর’ দ্বারা হজরত মুহাম্মাদকে (সা.) বোঝানো হয়েছে (তাফসিরে বাইজাভী)।

প্রিয় নবিজি (সা.) ছিলেন আল্লাহর শ্রেষ্ঠ রাসূল। ঈমান-ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য আল্লাহতায়ালা তাঁকে অনেক মোজেজা বা অলৌকিক ক্ষমতা দান করেছেন। তন্মধ্যে কিছু মোজেজা তাঁর জন্মের সময় পরিলক্ষিত হয়েছিল। হজরত উসমান ইবনে আবুল আস (রা.)-এর মাতা ফাতিমা বিনতে আবদুল্লাহ বলেন, আমি রাসূলের (সা.) জন্মের সময় আমেনার কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন আমি দেখলাম হঠাৎ করে পুরো ঘর উজ্জ্বল আলোয় ভরে গেল এবং আরও দেখলাম আসমানের তারকারাজি নিচের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এমনকি আমি ধারণা করেছিলাম, এ তারকারাজি আমার ওপর পতিত হবে (ইবনে হাজর, ফতহুল বারী- ৬/৪২৬)।

মানুষ সৃষ্টির জন্য আল্লাহতায়ালার দুটি প্রক্রিয়া রয়েছে। একটা হলো সৃষ্টি প্রক্রিয়া, আরেকটি হলো জন্ম প্রক্রিয়া। যেমন-হজরত আদমকে (আ.) আল্লাহতায়ালা কারও মাধ্যম ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। অনুরূপভাবে হজরত ঈসাকে (আ.) আল্লাহতায়ালা বিশেষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করেছেন। অপর আরেকটি চিরাচরিত প্রক্রিয়া হলো মা-বাবার মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করা। কিন্তু প্রিয় নবির (সা.) ক্ষেত্রে সৃষ্টি ও জন্ম প্রক্রিয়া দুটিরই সম্মিলন ঘটেছে। নবিজির সৃষ্টি হয়েছে সবার আগে আর পিতা আবদুল্লাহর ঔরসে মা আমেনার মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছেন সব নবির শেষে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নবুওয়াত কখন অবধারিত হয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, যখন হজরত আদম (আ.) শরীর ও রুহের মধ্যে ছিলেন (সুনানে তিরমিজি-৩৬০৯)।

আল্লাহতায়ালা হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করার পর তাঁকে যখন (হে আবু মুহাম্মাদ বলে) ইলহাম করা হলো তখন তিনি বলেন, হে আল্লাহ আপনি আমার কুনিয়াত ‘আবু মুহাম্মাদ’ কেন রেখেছেন? এর জবাবে আল্লাহতায়ালা বলেন, আপনার মাথা উত্তোলন করুন। তিনি মাথা উত্তোলন করে আরশ এবং এর চারপাশে হজরত রাসূলের (সা.) নূর মোবারক দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ নূর কার? উত্তরে আল্লাহতায়ালা বলেন, ওই নবির নূর, যিনি আপনার বংশ দিয়েই আসবেন। তাঁর নাম আসমানে আহমদ এবং জমিনে মুহাম্মাদ (সা.)। তিনি যদি না হতেন তবে আপনাকে সৃষ্টি করতাম না, আসমান আর জমিনও সৃষ্টি করতাম না (ইমাম শিহাব উদ্দিন কাস্তালানী, আল মাওয়াহিবু লাদুন্নিয়া, ১/৫৭)।

কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহর আনুগত্যের সঙ্গে সঙ্গেই রাসূলের (সা.) প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের নির্দেশ রয়েছে। রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাস্বরূপ।

ইরশাদ হচ্ছে-‘এবং আমি আপনার জন্য আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি’ (সূরা ইনশেরাহ-৪)। রাসূলের (সা.) রওজা শরিফে ৭০ হাজার ফেরেশতা আকাশ থেকে মিছিল সহকারে দৈনিক দুবার ফজরে ও আসরে আসেন এবং সালাম পেশ করতে থাকেন। কেয়ামত পর্যন্ত এ নিয়ম চলতে থাকবে।

ইরশাদ হচ্ছে-নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা রাসূলের (সা.) ওপর দরুদ পেশ করছেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার ওপর দরুদ ও সালাম পেশ কর আদবের সঙ্গে (সূরা আহযাব-৫৬)।

একবার এক সাহাবি উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকার (রা.) কাছে প্রিয় নবির (সা.) আখলাক সম্পর্কে জানতে চাইলে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বললেন, কুরআন মাজিদই তাঁর আখলাক। হজরত আয়েশা সিদ্দিকার (রা.) এই একটি ছোট্ট উক্তির মাধ্যমেই প্রিয় নবির (সা.) মহান জীবনাদর্শের সার্বিক দিক প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘মহান আখলাকসমূহ পূর্ণভাবে বিকশিত করার জন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে।’

প্রিয় নবির আখলাক, তাঁর জীবনাদর্শ আল্লাহ নিজেই গড়ে তুলেছেন। তিনি যা কিছু বলেছেন, তার সবই আল্লাহ কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে বলেছেন এবং তিনি যা কিছু করেছেন, তার সবই আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের জন্য করেছেন। আল্লাহ তাঁকে যা করতে আদেশ করেছেন, তিনি তা পূর্ণভাবে পালন করেছেন; যা করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন, তা আদৌ করেননি। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তিনি নিজের থেকে কিছুই বলেন না, তাঁর কাছে যে ওহি আসে তিনি সেই ওহিই বলেন।’

তিনি মহান আখলাকসমূহকে নিজে যেমন আমল দ্বারা পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত করেছেন, তেমনি তার সাহাবিরা তাকে হুবহু অনুসরণ ও অনুকরণ করে সেই মহান আখলাকের গতিধারাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। যার প্রবাহ যুগে যুগে শ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শরূপে গতি সঞ্চারিত করে আসছে।

ইসলাম গতানুগতিক আচারসর্বস্ব কোনো ধর্ম নয়, আবার প্রাণহীন নিরস মতাদর্শও নয়। তাই শুধু জন্ম বা মৃত্যু দিবসকে কেন্দ্র করে বিশেষ স্মরণের নীতি ইসলাম অনুমোদন করে না। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষণে রাসূলের (সা.) শিক্ষা মুমিনকে অনুপ্রাণিত করে। সত্য-সুন্দরের পথে চলতে নির্দেশনা দেয় জীবনের বাঁকে বাঁকে। আজকের অস্থির এ সময়ে রাসূলের (সা.) শিক্ষাই পারে মানবজাতিকে তাদের কাক্সিক্ষত সেই শান্তির পথে পরিচালনা করতে। তাই নবিজির জন্ম ও মৃত্যুর পবিত্র এ মাসে তাঁর আদর্শে জীবন পরিচালনার শপথ নিতে হবে আমাদের। রাসূলের (সা.) সম্প্রীতি, মানবতা ও উদারতার শিক্ষা ধারণ করতে হবে মন ও মননে। মুফতি তানজিল আমির : তরুণ আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী, সূত্র : যুগান্তর

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.