রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:০৬ pm
আশরাফুল ইসলাম রনজু, নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর তানোরে মেয়রের দপ্তরে মঙ্গলবার লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ঠিকাদাররা। মেয়র পছন্দের লোককে কাজ দিতে চান। তাই পুরোনো নিবন্ধিত ঠিকাদারদের লাইসেন্স হালনাগাদ করে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ ঠিকাদারদের।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, তানোর পৌরসভায় সম্প্রতি ১২ অক্টোবর ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার একটি উন্নয়নকাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু এই পৌরসভার নিবন্ধিত ঠিকাদারদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ। ফলে তাঁরা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছেন না। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কাজ পাবেন কে?
এনিয়ে ঠিকাদার আতিকুর রহমান জানান, লাইসেন্স হালনাগাদ না করার বিষয়ে ১৩ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন কয়েকজন ঠিকাদার। লাইসেন্স নবায়নের জন্য তাঁরা কয়েকজন মেয়র ইমরুল হকের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর দপ্তরে যান। এসময় অভিযোগ দেওয়ার কারণে তাঁদের দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মেয়র। অশালীন আচরণ শুরু করেন। একজন ঠিকাদার মোবাইল ফোনে মেয়রের এ ধরনের আচরণের ভিডিও শুরু করেন। তখন মেয়রের নির্দেশে কার্যসহকারী এসে তাঁদের লাঞ্ছিত করেন। এব্যাপারে কথা বলতে দুপুরে তাঁরা স্থানীয় সরকার বিভাগের রাজশাহীর উপপরিচালকের কার্যালয়ে যান।
ঠিকাদার আতিকুর আরও বলেন, ‘আমাদের লাইসেন্স নবায়ন করে দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে দিলে অন্তত ১২ লাখ টাকা রাজস্ব পাবে পৌরসভা। এই টাকা না নিয়ে মেয়র কার স্বার্থে আমাদের লাইসেন্স নবায়ন করে দিচ্ছেন না সেটাই আমাদের প্রশ্ন।’
ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা জানান, তানোর পৌরসভার নিবন্ধিত ঠিকাদার ৬৫ জন। জুন মাসে তাঁদের সবার লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। এরপর তাঁরা লাইসেন্স নবায়ন করতে গেলে তখন দেওয়া হয়নি। মেয়র বলেছিলেন, এখন পৌরসভায় কাজ নেই। কাজ শুরু হওয়ার আগেই লাইসেন্স হালনাগাদ করে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ১২ অক্টোবর ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার একটি কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৭ অক্টোবর। দরপত্রে অংশ নিতে হলে ঠিকাদারদের লাইসেন্স হালনাগাদ থাকতে হবে। কিন্তু তানোর পৌরসভার নিবন্ধিত কোনো ঠিকাদারের লাইসেন্স হালনাগাদ নেই। হালনাগাদের জন্য তাঁরা পৌরসভায় বারবার গেলেও দেওয়া হচ্ছে না। শতভাগ জরিমানা দিতে ঠিকাদাররা রাজি হলেও লাইসেন্স হালনাগাদে রাজি হননি মেয়র ইমরুল হক।
ঠিকাদারেরা আরও জানান, নগর উন্নয়ন অবকাঠামোর এই প্রকল্পে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের কাজ আছে। মোট ছয়টি গ্রুপে কাজ হবে। তাঁদের আশঙ্কা, মেয়র ইমরুল হক তাঁর পছন্দের লোককে কাজ দিতে চান। এজন্য পছন্দের ঠিকাদারকে লাইসেন্স করে দেওয়া হবে নতুন করে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই মেয়রের পছন্দের ঠিকাদার কাজ পাবেন। আর এতে হবে বড় ধরনের দূর্নীতি।
বিষয়টি জানতে চাইলে ইউএনও পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, অভিযোগের কপি পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এব্যাপারে তানোর পৌরসভার মেয়র ইমরুল হকের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, অফিসিয়াল বিষয় এজন্য আমি এসব বিষয়ে মোবাইলে কোনো কথা বলব না। অফিসে আসেন, কথা হবে বলে সংযোগ বিছিন্ন করেন মেয়র।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহী এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইয়াসিন আলী, মেসার্স রোজ এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম ও মেসার্স মাহী এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী আতিকুর রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী, জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের রাজশাহীর উপপরিচালককে ও উপজেলা চেয়ারম্যানকেও দেওয়া হয়েছে। আজকের তানোর