রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:১০ am
ক্রীড়া ডেস্ক : টুর্নামেন্টের আগের দিন কড়া মন্তব্যে হুঙ্কার তুলেছিলেন স্কটল্যান্ড কোচ শেন বার্জার। বাংলাদেশকে ওমান, পাপুয়া নিউগিনি থেকে ওপরে রাখেন না বলেছিলেন তিনি।
তার কথার জবাব দিতে হতো মাঠেই কিন্তু বাংলাদেশ পারল না। চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় ডুবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই বিব্রতকর হারের স্বাদ পেল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
রোববার ওমানের মাস্কাটে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা উপহার দিল এক রাশ হতাশা। বাংলাদেশকে ৬ রানে হারিয়ে আসর মাতিয়ে দিয়েছে স্কটল্যান্ড। আগে ব্যাট করে তাদের করা ১৪০ রানের জবাবে ১৩৪ রানে থামে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে হারানোর নায়ক ক্রিস গ্রিভস। দলের বিপর্যয়ে ২৮ বলে ৪৫ করার পর এই লেগ স্পিনার হয়ে গেলেন মূল হন্তারক। ৩ ওভার বল করে ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ভালো করেছেন বাকিরাও। এই নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে দুই দেখায় দুবারই বাংলাদেশকে হারাল স্কটিশরা। ২০১২ সালে আগের দেখায় জিতেছিল তারা।
ম্যাচ জিততে এক পর্যায়ে শেষ ৩ ওভারে দরকার ছিল ৩৭ রান। সাবলীল খেলতে থাকা আফিফ হোসেন ছক্কার প্রয়োজনে উঠিয়ে মারতে গিয়ে ওই ওভারে ধরা পড়েন মার্ক ওয়াটের বলে। আসে মাত্র ৫ রান। সম্ভাবনা হয়ে যায় আরও নিভু নিভু।
পরের ওভারে নুরুল হাসান সোহানকে ছাঁটেন ব্র্যাড হুইল। ওই ওভারে এক ছয় মেরে ধুঁকতে থাকা মাহমুদউল্লাহও ধরা পড়েন বাউন্ডারি লাইনে। ম্যাচ অনেকটাই মুঠোয় চলে যায় স্কটিশদের। শেষ ওভারে ২৪ রান দরকার হলে শেখ মেহেদী কিছু রান এনে হারের ব্যবধানই কমিয়েছেন।
উইকেট ছিল কিছুটা মন্থর। তবে স্কটল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে রান তাড়ার সমীকরণ কঠিন ছিল না। শুরুতে ওপেনারদের হারানোর পর দুই অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম অনেকটা সময় ক্রিজে ছিলেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টির চাহিদা মেটেনি তাদের ব্যাটে।
ফর্ম হারানো মুশফিক শুরুতে জড়তা কাটিয়ে পুষিয়েছিলেন কিছুটা কিন্তু সাকিব খেলেন অসম্ভব মন্থর গতিতে। তার ২৮ বলে ২০ রানের ইনিংসটাই রান তাড়ার গতি করে দেয় উলটো। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও শেষ পর্যন্ত টিকে ২২ বলে করেছেন ২৩ রান।
১৪১ রান তাড়ায় নেমে মুখোমুখি প্রথম বলেই বাউন্ডারি পেয়েছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু একই চেষ্টায় দ্বিতীয় ওভারে বিদায় তার। জশ ডেভির বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ মিড উইকেটে।
হতাশ করেন লিটন দাসও। চতুর্থ ওভারে হুইলের বল এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড অফে। ৭ বলে ৫ রান করে ফেরেন তিনি। ১৮ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
বিপাকে পড়া বাংলাদেশকে চেপে ধরে পাওয়ার প্লেতে ২৫ রানের বেশি নিতে দেয়নি স্কটল্যান্ড। ফর্মহীন মুশফিকুর রহিম শুরু করেন মন্থর গতিতে। সাকিব রানের খোঁজে থাকলেও রান আসছিল না সহজে।
নবম ওভারে জড়তা ভাঙ্গেন মুশফিক। স্লগ সুইপে মাইকেল লিস্ককে মারেন টানা দুই ছয়। ওই ওভার থেকে আসে ১৬ রান। এক পর্যায়ে ২০ বলে ১৪ রানে থাকা মুশফিক দ্রুতই পুষিয়ে দেন। সাকিব আর পুষাতে পারেননি। ২৮ বলে ২০ করে পুল করে ক্যাচ দেন বাউন্ডারি লাইনে। এতে ভেঙ্গে যায় তৃতীয় উইকেটে ৪৭ রানের জুটি।
আশা-ভরসা হয়ে টিকে থাকা মুশফিক কাজ অসমাপ্ত রেখেই নেন বিদায়। ডট বলের চাপ বাড়িয়ে তাকে অস্থির করে তুলে সাফল্য আনেন স্কটল্যান্ড। লেগ স্পিনার গ্রিভসের বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ৩৬ বলে ৩৮ করা মুশফিক।
গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নামা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ সময়ের দাবি মেটাতেই পারছিলেন না। কোনভাবেই মিলছিল না টাইমিং। ডট বলে তিনিই বাড়াচ্ছিলেন দলের চাপ। তার পাশে আফিফ হোসেন অবশ্য ছিলেন উজ্জ্বল। ১৮তম ওভারে ১১ বলে ১৮ করা আফিফের আউটে চূড়ান্ত ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। সেই জায়গা থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি।
এর আগে টস জিতে বল করতে গিয়ে তিন পেসার বাংলাদেশকে পাইয়ে দেন দারুণ শুরু। গতির ব্যাবহারে তাসকিন আহমেদ শুরুতেই ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেন। মোস্তাফিজ তার প্রথম ওভারই করেন মেডেন। সাইফুদ্দিন নিজের প্রথম ওভারেই পান উইকেট।
তৃতীয় ওভারে বল হাতে পেয়ে দারুণ ইয়র্কারে স্কটিশ অধিনায়ক কাইল কোয়েতজারকে ফেরান তিনি। পাওয়ার প্লেতে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে জর্জ মানজির হাতে অবশ্য মার খান মোস্তাফিজ। তার থেকে ১৩ রান নিয়ে প্রথম ছয় ওভারে ৩৯ তুলে স্কটল্যান্ড।
দ্বিতীয় উইকেটে ৪০ রানের জুটির পর ব্রেক থ্রো পায় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের পর বল করতে এসে ম্যাথু ক্রসকে অনেকটা ইয়র্কার ধর্মী ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ করে দেন শেখ মেহেদী। ওই ওভারেই দারুণ খেলতে থাকা মানজিকে বোল্ড করে দেন মেহদী। স্কটিশ বাঁহাতির ইনিংস থামে ২৩ বলে ২৯ করে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে একটাই টি-টোয়েন্টি খেলেছিল স্কটল্যান্ড। সেই ম্যাচে ৫৮ বলে সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়েছিলেন রিচি বেরিংটন। টি-টোয়েন্টির তিন নম্বর অলরাউন্ডারকে এদিন বেশি বাড়তে দেননি সাকিব। একাদশ ওভারে সাকিবকে ছক্কা পেটাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন তিনি।
দুই বল পরই গ্রেইভ লিস্ক একই চেষ্টায় ধরা ফিরে গেলে টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়ে যান সাকিব।
পরের ওভারে কালাম ম্যাকলাউডকে বোল্ড করে দিয়ে তৃতীয় উইকেট পান মেহেদী। ৫৩ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে স্কটিশরা। এরপর ক্রিস গ্রেইভস-মার্ক উড মিলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালান।
তাসকিন এসে ভাঙ্গেন তাদের ৫৩ রানের জুটি। ১৭ বলে ২২ করে তিনি ধরা পড়েন সৌম্যের হাতে। বাকি পথে স্কটিশদের ভরসা ছিলেন গ্রেইভসই। শেষ ওভারে মোস্তাফিজের শিকার হওয়ার আগে করেন ২৮ বলে ৪৫ রান। তার ওই ইনিংসই পরে গড়ে দিল ব্যবধান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
স্কটল্যান্ড : ২০ ওভারে ১৪০/৯ (মানজি ২৯ , কোয়েতজার ০, ক্রস ১১, বেরিংটন ২, ম্যাকলাউড ৫, লিস্ক ০, গ্রিভস ৪৫ , ওয়াট ২২, ডেভি ৮, শরিফ ৮*, হুইল ১* ; তাসকিন ১/২৮, মোস্তাফিজ ২/৩২ , সাইফুদ্দিন ১/৩০, সাকিব ২/১৭, শেখ মেহেদী ৩/১৯, আফিফ ০/১০)
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৩৪/৭ (লিটন ৫ , সৌম্য ৫, সাকিব ২০, মুশফিক ৩৮, মাহমুদউল্লাহ , আফিফ ১৮ , সোহান ২, শেখ মেহেদী ১৩* , সাইফুদ্দিন ৫* ; হুইল ৩/২৪, ডেভি ১/২৪, শরিফ ০/২৬, লিস্ক ০/২০, ওয়াট ১/১৯ , গ্রিভস ২/১৯)
ফল : স্কটল্যান্ড ৬ রানে জয়ী। আজকের তানোর