এত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের কারণ জানতে চাইলে শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘আমার সরকারি চাকরির বয়স পেরিয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে এনটিআরসিএতেও আমার আবেদনের সুযোগ না-ও থাকতে পারে। এবার আমার বিষয়ে উচ্চবিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫০০টি পদ ছিল। এই নিয়োগের পর হয়তো আর পদ না-ও থাকতে পারে। আমি চেয়েছিলাম, বাংলার যে প্রান্তেই একটা পদ ফাঁকা থাকুক, সেটা যেন আমার হয়। একটা চাকরির আশায় এত টাকা খরচ করেছিলাম।’
অভিযোগ করে এই চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, দুই প্রতিষ্ঠানে সিট এখনো ফাঁকা। তারা বলেছে, সিট ফাঁকা, কিন্তু কেউ আবেদন করেননি। অথচ সেখানে তিনি আবেদন করেছিলেন। তাঁকে নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএতে অভিযোগ করেছেন জানিয়ে শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘তারা এখনো আমাকে কিছু জানায়নি। এ ছাড়া নারী কোটায় সাড়ে ৮ হাজার পদ ফাঁকা ছিল, আমি নারী ছিলাম, তা-ও আমাকে নেওয়া হয়নি।’ বন্ধনপ্রাপ্তদের আগে চাকরি, এক আবেদনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির সুযোগ তৈরি হওয়াসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে ৮ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পাওয়া এনটিআরসিএর সনদধারী এই ব্যক্তিরা।
৮ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অর্ধশতাধিক বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পাওয়া এনটিআরসিএর সনদধারী চাকরিপ্রত্যাশী মানববন্ধনে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ছয়জনের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁরা প্রত্যেকে জানান, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন। এনটিআরসিএ একটি আবেদনের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হলে তাঁরা আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তেন না। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে এনটিআরসিএ।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান প্রথম আলোকে বলেন, আগে নিবন্ধন পরীক্ষা হতো, পাস করলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগ দিয়ে দিত। ২০১৫ সালের পর মেধার ভিত্তিতে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার পর থেকে বাছাইয়ের কাজটি হয় অটোমেশনের মাধ্যমে। আবেদনের কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকায় যাঁরা খুব কম নম্বর পাওয়া, তাঁরা অনেকগুলো স্কুলে আবেদন করেন। কম নম্বর পেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করে নিয়োগ না-ও হতে পারে। তাঁরাও এত বেশি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে বলেন না।
৭০ নম্বর পেয়েও নিয়োগ পাননি শেরপুরের নালিতাবাড়ীর হাসিবা আফরিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৯৫টি উচ্চবিদ্যালয়ে আবেদন করতে গিয়ে আমার ৩৮ হাজার ৩৫০ টাকা খরচ হয়েছে। আমার স্বামী ধার করে এসব টাকা জোগাড় করেছেন। করোনার মধ্যে এমনিতেই আয়-রোজগার নেই। তার মধ্যে এত টাকা ধার করেছি। এখন কীভাবে শোধ করব, জানি না।’
মাদারীপুরের ঘটমাঝির মো. তাইজুল ইসলাম ৫২০টি উচ্চবিদ্যালয়ে আবেদন করেন। সব মিলিয়ে এতে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ৭২ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘একটি আবেদনের মাধ্যমে নিয়োগ হলে আমার এত টাকা খরচ হতো না।’
এ বিষয়ে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান বলেন, বিসিএসের মতো একটি আবেদনের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে কাজ করছেন তাঁরা। এখানে সমস্যা হলো, অনেকগুলো মামলা আছে, এসব জটিলতার কারণে পারা যায় না। তারপরও চেষ্টা করা হচ্ছে।
এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে এই প্রক্রিয়া শুরুর পর মোট ১৬টি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে ১৫টি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে ৬ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি চাকরিপ্রত্যাশী নিবন্ধিত হয়েছেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত এনটিআরসিএ নিয়োগের সুপারিশ না করায় তখন কত শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন, সেই তথ্য তাদের কাছে নেই। ২০১৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮৬ হাজার ২৮৯ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ।
নিবন্ধন পেয়েও চাকরি না হওয়া ব্যক্তিদের দাবি, প্রথমে যাঁরা নিবন্ধন পেয়েছেন, তাঁদের আগে নিয়োগ দিতে হবে। ইতিমধ্যে নিবন্ধনপ্রাপ্তদের নিয়োগ দেওয়া শেষ না করে নতুন করে নিবন্ধনের জন্য পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নতুন করে পরীক্ষার সুযোগ রাখা যাবে না এবং শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা রাখতে হবে। সূত্র : প্রথমআলো