শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:০৮ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ! রাজু আহমেদ তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ
গ্রামীণ সুদের অস্বাস্থ্যকর অর্থনীতি : তুষার আবদুল্লাহ

গ্রামীণ সুদের অস্বাস্থ্যকর অর্থনীতি : তুষার আবদুল্লাহ

সেদিন এক গ্রামের বাজারে ঘুরছিলাম। কত পণ্যের খুচরা ও পাইকারি পশরা। মাছ, তরিতরকারি এসেছে আশপাশের গ্রাম থেকে। সেদিন ছিল হাটের দিন। ভিড়ের মাঝেই দুই জন মানুষ পেলাম যারা মুঠোতে, লুঙ্গির কোমড়ে টাকা নিয়ে ঘুরছেন। ভাবলাম হাট ঘুরে খুচরো টাকার ব্যবসা করেন তারা।

কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম পাঁচশ, হাজার টাকার নিচের কোনও নোট নেই তাদের কাছে। সন্দেহ হলো, খুচরা টাকার ব্যবসায়ীর কাছে তো খুচরো টাকা থাকার কথা।

একজনের পিছু নিলাম, দেখি তিনি কোন দোকানে গিয়ে দাঁড়ান। আমি তাকে অনুসরণ করছি। তিনি একেকটি দোকানে গিয়ে দাঁড়ান আর কারও সঙ্গে ইশারায়, কারও সঙ্গে নিচু কণ্ঠে কথা বলেন। এক দোকানে দেখলাম টাকার একটা বান্ডেল ছুঁড়ে দিলেন। আমি ওই দোকানির পাশে গিয়ে বসলাম।

জানতে চাইলাম- খুচরা নিতে কত বেশি দিতে হলো? দোকানি জানালেন, খুচরা না, টাকা কর্জ করলেন। সুদে টাকা নিলেন। হাটে মাল কিনবেন। হাজারে একশ টাকা সুদ দিতে হবে।

একদিনেই একশ টাকা! মাল বিক্রি করে আজই শোধ দিতে হবে। না দিতে পারলে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। জানতে চাই, যদি আরও বেশি দেরি হয়? বললেন- সুদে মাফ নেই। অতি দেরি হলে, এসে দোকানের মাল নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। দোকানির কাছ থেকে সরে এসে চায়ের দোকানে খুঁজে পাই কর্জ দেওয়া বা সুদ ব্যবসায়ীকে।

তিনি ৫ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এখন বাজারে তার পাওনা আট লাখ টাকা। নতুন টাকা বিনিয়োগ করতে হয়নি। সুদের টাকাতেই বিনিয়োগ বাড়ছে। টাকা তোলার জন্য কিছু মাস্তান পালতে হয়। কিছু হাত খরচ। মাসের লাখ টাকা আয়ের কাছে খুব সামান্য এই খরচ। বাজারের দোকানিরা ধীরে ধীরে ৬/৭ জন সুদ ব্যবসায়ীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এককথায় বলা যায় বাজারটির এখন এই সুদ ব্যবসায়ীদের হাতে।

বাজারের নিয়ন্ত্রণ যেমন, তেমনই গ্রামও চলে গেছে সুদ ব্যবসায়ীদের কব্জায়। কৃষক একশ টাকায় ১০ থেকে ২০ টাকা সুদে টাকা নিচ্ছেন। চৈত্র মাসে কৃষক যে টাকা কর্জ নেন, তার সুদ পরিশোধ করেন ধানের বিনিময়ে। কোথাও কোথাও টাকা ও ধান দুটোই দিতে হয়।

সময় মতো টাকা দিতে না পারলে, উঠোনে সুদ ব্যবসায়ীরা এসে ঠিকই ঘুঘু চড়িয়ে যান। শুধু কৃষক নন, কন্যা দায়গ্রস্ত পরিবার, সন্তানের শিক্ষা, পরিবারের চিকিৎসার জন্যও সুদে টাকা কর্জ করেন গ্রামের মানুষ। জুয়া ও নেশার জন্যেও সুদে টাকা নেওয়ার অভ্যাস আছে। শুধু ব্যক্তি নয়, সমিতির মাধ্যমেও চলে সুদ বাণিজ্য। গ্রামে গ্রামে সমিতি তৈরি হয়েছে।

তারা সমবায়ের নামে টাকা তুলে, সেই টাকা সুদ ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে। সমিতির সুদের টাকা না দিতে পারলে, পুরো সমিতিই গ্রহীতার ওপর হামলে পড়ে। সুদের টাকা না দিতে পারার প্রতিশোধ হিসেবে, ধর্ষণ- খুনের মতো ঘটনাও ঘটছে গ্রামে।

করোনাকালে এই সুদ ব্যবসা আরও রমরমা হয়েছে। মানুষের কাজ শূন্য হওয়া, ব্যবসায় ধস বা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে গেলে কর্জ করে আবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, পরিবারের সংকট সামলে নেওয়া। ব্যবসায় পুনঃবিনিয়োগের জন্য মানুষ নিরুপায় হয়ে ব্যক্তি বা সমিতির কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছে, নিচ্ছে।

যারা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছেন, তারা চেষ্টা করছেন টাকা ফেরত দেওয়ার। যারা পারেননি, তারা অসহায় হয়ে প্রিয় সম্পদের যেটুকু আছে তাই কর্জদাতার হাতে তুলে দিচ্ছেন। যারা পারছেন না, তাদের কেউ কেউ ঘর ছাড়া। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

গ্রামীণ সুদের এই অর্থনীতির কথা স্থানীয় প্রশাসনের অজানা নয়। অর্থনীতির চিন্তকদের কাছেও পরিচিত। গ্রামে কৃষি ও শিল্প অর্থনীতির প্রসার ঘটছে। নতুন ফসল যুক্ত হচ্ছে। কৃষি-শিল্প অর্থনীতি তৈরি করেছে নতুন সম্ভাবনা। টেকসই ইঙ্গিতও রয়েছে।

কিন্তু প্রান্তিক কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ঋণের জোগান নিশ্চিত করা যায়নি। কৃষকদের দশ টাকার একাউন্ট খুলে দেওয়ার পরও তাদের করা যায়নি ব্যাংকমুখী। সরকারি সমবায়ের জটিল আমলাতন্ত্র ও ভোগান্তি সমবায় বান্ধব করতে পারছে না প্রান্তিকজনদের।

তাদের কাছে সুদ ব্যবসায়ীরাই সহজলভ্য। এই সহজলভ্য অর্থের জোগানদারদের সহজ সেবায় কঠিন হচ্ছে প্রান্তিক মানুষের জীবন। নিঃস্ব এবং দেওলিয়া হচ্ছে মানুষ। করোনাকাল সুদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে। সেই চাঙ্গা অর্থনীতি আমাদের প্রান্তিক অর্থনীতির স্বাস্থ্যহানী ঘটাচ্ছে। জানি না অর্থ গবেষক ও সরকার স্বাস্থ্যের এই দিকটি নজরে রেখেছে কিনা। লেখক : তুষার আবদুল্লাহ, বার্তা প্রধান সময় টিভি

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.