শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:০৯ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামে এক ঐতিহাসিক বাস্তব জীবনের পটভূমি সৃষ্টি হয়েছে। হারিয়ে যাওয়ার ৭০ বছর পর আপন ঠিকানাসহ প্রিয়জনদের খুজে পেয়েছেন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী। খুজে পাবার পর স্বজনরা জানান, ছেলের আশায় এখনও পথ চেয়ে আছেন আব্দুল কুদ্দুসের শতবর্ষী মা। আর খুব শীঘ্রই দেখা হতে যাচ্ছে মা-ছেলের।
৭০ বছর আগে পুলিশ সদস্য চাচার সাথে ব্রহ্মণবাড়িয়া থেকে রাজশাহীর বাগমারায় বেড়াতে এসে হারিয়ে যান ১০ বছর বয়সী আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি। অনেক খোঁজা-খুজির পর তাকে না পাওয়া গেলে, পরিবারের সদস্যরা মনে করেন সম্পত্তির লোভে পিতা-মাতার একমাত্র পুত্র সন্তান আব্দুল কুদ্দুসকে বেড়াতে নিয়ে যাবার নাম করে হত্যা করে তার চাচা।
৭০ বছর পর হারিয়ে যাওয়া সেই আব্দুল কুদ্দুস মুন্সিকে খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার। ১০ বছরের সেই ছোট্ট শিশুটি আজ ৮০ বছরের বৃদ্ধ।
দিন দশে’ক আগে আইয়ূব আলী নামের পরিচিত একজনের ফেসবুক আইডিতে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলেন আব্দুল কুদ্দুস। সেখানে তিনি শুধু পিতা-মাতা ও নিজ গ্রাম বাড্ডার নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আব্দুল কুদ্দুসকে খুঁজে পান তার পরিবারের সদস্যরা।
আব্দুল কুদ্দুসের স্বজনরা জানান, এখনও জীবিত আছেন তার শতবর্ষী মা ও এক বোন। এরই মধ্যে মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথাও বলেছেন আব্দুল কুদ্দুস। আর এত বছর পর নিজের পরিবার খুজে পাওয়ায় খুশি আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী-সন্তানরাও।
আইয়ুব আলী বলেন, গত ১২ এপ্রিল আব্দুল কুদ্দুসের ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও আমার ফেসবুক পেজে আপলোড করি। আর ফেসবুকে ওই পোস্টের উপরে লিখে ছিলাম যে, ব্রহ্মণবাড়িয়া জেলার নবিনগর থানার এই বৃদ্ধা আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে হারিয়ে গিয়ে পরিবার বিচ্ছিন্ন। কেউ যদি তার কথা শুনে চিনতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, তার পরে বহু মানুষ সেই পোস্ট শেয়ার করেন। বিদেশে কিছু মানুষ ওই এলাকার আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন তারা দেখেন। তার পরে ওই এলাকার মানুষ ফেসবুকে আব্দুল কুদ্দুসের ভিডিও শুনে ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আব্দুল কুদ্দুসের সন্ধান পান তার পরিবারের মানুষ।
আব্দুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের জানান, আমার চাচা পুলিশ তার সাথে বাগমারা থানায় ব্রহ্মণবাড়িয়া থেকে বেড়াতে এসে হারিয়ে যায়। তার পরে আত্রাই সিংসাড়া গ্রামে কোন ভাবে চলে আসি। তার পরে বাগমারা বারুইপাড়া গ্রামে এক মেয়ের সাথে বিয়ে হয়। তিন ছেলে ও এক মেয়ে হয়। এনিয়ে এখানেই আমার বসতবাড়ি হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, আমার মায়ের সাথে ভিডিও কলে প্রথম যখন কথা বলি তখন আমার মা আমাকে বলে তুই আমার হারিয়ে যাওয়া আব্দুল কুদ্দুস বাবা। তোর ছোট বেলায় হাত কেটে গিয়েছিলো। মায়ের মুখে এ কথা শুনার পরে আমি বলি, মা তোর কুদ্দুসের কোন হাত কেটে গিয়েছিলো, তখন মা বলে বাম হাতের বুড়া আঙ্গুলের কেটে গিয়েছিলো, তখন আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। আর বুঝতে পারি যে আমার মা সেই।
এদিকে হারিয়ে যাবার ৭০ বছর পর পরিবারের সাথে যোগাযোগের বিষয়টি আলোড়ন ফেলেছে আব্দুল কুদ্দুসের বর্তমান আবাস বাগমারার বারুইপাড়া গ্রামেও। চায়ের দোকান থেকে পাড়ামহল্লার মোড়ে মোড়ে মানুষের মুখে মুখে ফিরছে আব্দুল কুদ্দুসের গল্প।
সব ঠিক থাকলে আসছে শনিবার মায়ের সাথে দেখা করতে ব্রহ্মণবাড়িয়া যাবেন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি। ৭০ বছর পর মা ফিরে পাবেন তার যক্ষের ধন, আর ছেলে পাবেন মায়ের পরস। আজকের তানোর