শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৫৯ pm
ডেস্ক রির্পোট : করোনায় স্কুল বন্ধ থাকা কালীন নাটোরের নলডাঙ্গায় অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর এসব শিক্ষার্থী আর স্কুলে যাচ্ছে না। গত কয়েক দিন ধরে স্কুল খোলা হলেও তাদের উপস্থিত হতে দেখা যায়নি।
উপজেলার পূর্ব সোনাপাতিল গ্রামের শিশু মো. রাকিব ইসলাম (১২) সোনাপাতিল দাখিল মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল। করোনাকালে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরিবার তাকে কাজে পাঠায়। সে এখন গ্রামের একটি খাবারের হোটেলে কাজ করে। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও রাকিবকে আর মাদ্রাসায় পাঠানোর আগ্রহ নেই পরিবারের…
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, শিশু রাকিব হোটেলে মানুষদের খাবার পরিবেশনে ব্যস্ত। সকালে হোটেলের খাবার তৈরি করা থেকে শুরু করে টেবিল পরিস্কার, থালাবাসন ধোঁয়াসহ বিভিন্ন কাজ করে সে।
শিশু শ্রমিক রাকিব জানায়, প্রতিদিন তার বেতন ৬০ টাকা। ওভারটাইম করলে এবং আরও বেশি কাজ করলে মাঝে মাঝে ১০০ টাকাও দেয়। নিজের হাত খরচের পাশাপাশি তার আয়ের ওপর পরিবারের নির্ভরশীলতা এসেছে। এখন তার স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই।
রাকিবের সঙ্গে এই হোটেলে কাজ করে আরেক শিশু শ্রমিক মো. পারভেজ হোসেন (১৪)। সে উপজেলার ব্রহ্মপুর প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। স্কুলে যাওয়ার কথা বললে সেও অনীহা প্রকাশ করে বলে, কাজ করলে টাকা পাই, স্কুলে গিয়ে কি হবে। স্কুলে যেতে মন চায় না।
শিশুদের এভাবে কাজে রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে হোটেল মালিক মোহন সরকার বলেন, করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামের অনেক বাচ্চারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে যাচ্ছিল। বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কায় অনেক শিশুর বাবা-মা এসে আমাদের অনুরোধ করে অনেকটা জোর করেই কাজে দিয়ে গেছেন। এখন স্কুল খোলার পরেও তারা কাজ ছাড়তে চাইছে না।
সোনাপাতিল দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. সেলিম রেজা বলেন, আমাদের স্কুলের কিছু বাচ্চারা অনুপস্থিত আছে। তারা অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারনে আসতে পারেনি, তবে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি তারা স্কুলে ফিরবে। যারা বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে তাদেরকেও স্কুলে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এদিকে নলডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলের স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী স্কুলমুখী হয়েছে। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে তাদের সন্তানদের মাঝে স্কুলে ফিরতে অনীহা দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ভট্টপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ শিশুর স্কুলে ফিরেছে। বাকিরা অসুস্থতাসহ নানা করাণে স্কুলে আসছে না। তাদের স্কুলমুখী করতে চেষ্ট চালানো হচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর শতকরা ৭৮ থেকে ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে। বাকিদের উপস্থিত না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যে সকল শিক্ষার্থীর শরীরের তাপমাত্রা বেশি তাদেরকে স্কুলে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে। এছাড়াও অসুস্থতাসহ আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কারণে অনেকেই আসছে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সকলেই স্কুলমুখী হবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান তিনি। আজকের তানোর