বৃহস্পতিবর, ০৫ িসেম্র ২০২৪, সময় : ০৮:৩৬ am
রাবি প্রতিবেদক : রুয়েটে আমার শৈশব কেটেছে। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই অনেক গাছ ক্যাম্পাসের ভেতরে ছিল। যে অর্ধশত গাছ রুয়েট কর্তৃপক্ষ কাটছে তার বয়স আনুমানিক ৬০ থেকে ৮০ বছরের বেশি হবে। এসব গাছ রুয়েটের ঐতিহ্য বহন করে। এগুলো এভাবে কাটা সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পাশে বসবাসকারী প্রবীণ ব্যক্তি সুকুমার সরকার (৮৮)।
তিনি আরও বলেন, গাছগুলো যৎসামান্য মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। সরকারি কোনো গাছ কাটতে হলে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি লাগে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। আবার শুনছি যারা গাছের টেন্ডার নিয়েছেন তারা রুয়েটেরই কর্মচারী।
রুয়েটের পাশেই অক্টোর মোড়ের আরেক প্রবীণ বাসিন্দা মো. মোসলেম উদ্দিন (৯৫)। পেশায় ঠিকাদার ও কাঠমিলের মালিক ছিলেন। এক সময় বড় বড় গাছ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
রুয়েটে গাছ কাটার বিষয়ে মোসলেম উদ্দিন বলেন, গাছগুলো রুয়েট কর্তৃপক্ষ যে দামে বিক্রি করছে তাতে সরকার রাজস্ব থেকে লাখ লাখ টাকা বঞ্চিত হচ্ছে। ২০১০ সালে আমি সাতটি গাছ রুয়েট থেকে নিলামে কিনেছিলাম পৌনে তিন লাখ টাকায়। কিন্তু ১১ বছর পর বর্ষীয়ান গাছগুলো পানির দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আম, লিচু, মেহগনি, কড়ই, মিনজিরি এবং কৃষ্ণচূড়া মিলিয়ে ১৫টি গাছ মাত্র এক লাখ ২৭ হাজার টাকায় গোলাম মোস্তফা নামের রুয়েটের এক কর্মচারীকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাছগুলো এতো কম দামে বিক্রি হওয়ার কথা নয়।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘১১ বছর আগেও গাছের খড়ি ৪০-৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতো। গাছের দামও ছিল ভালো। বর্তমানে শুধু খড়িই ২০০ টাকা মণ। সেক্ষেত্রে ৭০-৮০ বছরের গাছগুলোর মূল্য কম করে ধরলেও আনুমানিক সাত থেকে আট লাখ হবে। আবার একটি ৫০ বছর বয়সী মেহগনি গাছের মূল্য দেড় লাখের কম হওয়ার কথা নয়। অথচ মেহগনি, আম গাছসহ ১৫টি গাছ মাত্র এক লাখ ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রুয়েটের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, রুয়েট কর্তৃপক্ষ প্রায় ৫০টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ গাছের বয়স ৭০-৮০ বছর। এরই মধ্যে গোপনে প্রায় ১৫টি গাছ কাটা হয়েছে। বন বিভাগ এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
রুয়েটের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, গাছগুলো গোলাম মোস্তফা ও শাহ জাহান যোগসাজশ করে স্বল্পমূল্যে টেন্ডার করিয়েছেন। গোলাম মোস্তফা রুয়েটে কর্মরত কর্মচারী। অন্যদিকে, শাহ জাহানের স্ত্রী রুয়েট মেডিকেলের স্টাফ। শাহ জাহান রুয়েট ক্যাম্পাসেই কর্মচারী ভবনে বসবাস করেন। গাছ কেটে বিক্রি করা ও ঠিকাদারি বিভিন্ন কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত।
এ বিষয়ে রুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি সরকার রুয়েটে ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। যার আওতায় আছে ১১টি ১০তলা ভবন নির্মাণ, দুটি মেডিকেল ভবন নির্মাণ ও একটি ছাত্রাবাসের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ। তবে এজন্য মোট কতটি গাছ কাটা হচ্ছে তা আমার জানা নেই।’
এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়ে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তিনবার টেন্ডারও করা হয়েছে। এতে গোপন করার কিছু নেই।’
টেন্ডারের বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়েট কর্মচারী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়টি পরিকল্পনা ও উন্নয়নে অফিস এবং রুয়েটের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার তদারকি করছেন। আপাতত আমার নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে। আমি নামাজে যাবো, ভাই। ফ্রি থাকলে অফিসে আসুন। চা খেতে খেতে এ বিষয়ে কথা বলা যাবে।’
রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহমেদ নিয়ামুর রহমান বলেন, ‘সরকারি গাছ কাটার জন্য কর্তৃপক্ষের বাধ্যতামূলকভাবে অনুমোদন নেওয়া উচিত। বন বিভাগ অনুমতি না দিলে কোনো সরকারি দপ্তরই ছোট কিংবা বড় কোনো গাছই কাটতে পারবে না। আবার, কোনো গাছ কাটার প্রয়োজন হলে বন বিভাগই গাছের দাম মূল্যায়ন করবে।’
এ বিষয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, দুবছর আগেই গাছগুলো কাটার পরিকল্পনা ছিল। এজন্য প্রায় আড়াই হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। তবে গাছ কাটার টেন্ডার ও ইজারায় কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। আজকের তানোর