শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৫৫ am

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ বাংলাদেশ ও ভারত ভিসা জটিলতায় চার যৌথ সিনেমা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক
মাটি মানুষ ও শাইখ সিরাজ : সেলিনা হোসেন

মাটি মানুষ ও শাইখ সিরাজ : সেলিনা হোসেন

তাঁর সঙ্গে সামনাসামনি পরিচিত হওয়ার আগে তাঁকে দেখেছি টেলিভিশনের পর্দায়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করেছেন ‘মাটি ও মানুষ’ নামে। ভাবলাম, বাহ্ বেশ তো, কৃষি বিষয়ে অন্য রকম অনুষ্ঠান। গল্প লেখার সূত্রে যখনই সুযোগ পেয়েছি বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি, কিন্তু এই ছোট্ট দেশটির উর্বর মাটিতে ফসলের এত বৈচিত্র্য, তা ঠিকভাবে দেখিনি। ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানটি দেখার পরে অসম্পূর্ণ দেখাটি পূর্ণ হতে থাকল। এরপর যেখানেই গিয়েছি, স্থানীয় মানুষকে জিজ্ঞেস করে জেনেছি, অনেক গাছের নাম, ফুলের নাম। জানার কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে এই অনুষ্ঠান। এখন থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগে প্রকৃতি দেখা, মানুষ দেখার যে সূচনা হয়েছিল আমার জীবনে, তার রেশ ফুরোয়নি। নিজেকে শাসন করে বলি, ফুরাবে না কখনো। এই অফুরন্ত আনন্দের উৎস থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা হবে হঠকারিতার শামিল। তত দিনে শাইখ সিরাজের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। তাঁর আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। কখনো কৃষিবিষয়ক পুরস্কারের জন্য বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি। অনেক লেখা পড়তে পড়তে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করেছি। শাইখ সিরাজের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান আমার কৃষি দেখার দরজা খুলে দেয়। পরিচিত হই হরিধান আবিষ্কারকের সঙ্গে, পরিবেশবান্ধব ব্যক্তিদের সঙ্গে। যেন এ জগৎ আমারই ছিল, তারপরও হাত ধরে কেউ ডেকে এনে বলল, ‘দেখুন। দেখে নিজেকে জানুন।’

শাইখ সিরাজ ক্রমাগতভাবে তাঁর অনুষ্ঠানের মাত্রা বাড়িয়েছেন। চ্যানেল আই টেলিভিশনে শুরু করলেন হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান। তা-ও এক যুগ পার হয়েছে। অবাক হয়েছি দেখে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন দেশ থেকে বিদেশে গিয়েছে, কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার দেখতে শেখার আয়তন বেড়েছে। প্রতিনিয়ত এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে যাচ্ছে। টেলিভিশনে কৃষকের ঈদ আনন্দ আয়োজন করা হয়। এটিই একটি অনুষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য—একঘেয়েমির হাত থেকে রক্ষা করে। শাইখ সিরাজ বেশ সচেতনভাবে এ দিকটায় নজর রেখেছেন। কৃষিপণ্যকে শিল্পপণ্যে পরিণত করা যে অর্থনীতির জন্য কত জরুরি, তা তিনি তুলে ধরেছেন। সবচেয়ে ভালো লাগল দেখতে যে আমাদের দেশের নিরক্ষর, প্রায় নিরক্ষর কৃষকেরা ড্রাম সিডার ও লিফ কালার চার্টের মতো কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণে তৎপর রয়েছেন। দেশে এর ব্যবহার বেড়েছে। বাড়ছে উৎপন্ন শস্যের পরিমাণ। এমন উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান দরিদ্র বাংলাদেশের কৃষকের জানার অধিকারকে বাড়িয়ে দিতে সহায়ক শক্তি।

শহরবাসীর হৃদয় যদি মাটি ও মানুষকে চিনতে শেখে, সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যদি মাটি ও মানুষকে তাঁদের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যদি আইনসভায় কৃষকের প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে উপস্থিত হন, তবেই বুঝতে হবে এই অনুষ্ঠানের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য কৃষি খাতে বাস্তবায়িত হয়েছে।

এই অনুষ্ঠানে আছে জীবনের জলছবি, বেঁচে থাকার উপাদান তৈরির জন্য একনিষ্ঠ শ্রম, আছে দুঃখ-কষ্ট, চোখের জল, হাড়ভাঙা পরিশ্রম, বন্যায় ডুবে যাওয়া শস্যখেত, খরায় পুড়ে যাওয়া বিরান ফসলের মাঠ, অন্যদিকে আছে ফসলের প্রাচুর্যে ভরে ওঠা সোনালি ধানের শিষ কিংবা রবিশস্য অথবা ফলমূল আনাজপাতি। এসবই তো মানুষ এবং মানুষের হৃদয়ের কথা। এসব জীবনের গল্প, বিনোদনের মতো হৃদয়গ্রাহী বাস্তবের চিত্র, এর ভেতরই নিহিত আছে জনজীবনের রূপকথা। এই রূপকার শাইখ সিরাজকে আমার অভিনন্দন।

এ বছর হাতে পেয়েছি শাইখ সিরাজের নতুন বই ‘করোনাকালে বহতা জীবন’। রয়্যাল সাইজের ৩৬০ পৃষ্ঠার এ বইয়ে চমৎকারভাবে উঠে এসেছে করোনাকালের সময়। ডায়েরি লেখার আদলে লিখেছেন এ বইটি। শুরুর পৃষ্ঠায় আছে ‘সোমবার। ২৩ মার্চ ২০২০। চ্যানেল আই সংবাদকক্ষ।’ ডায়েরি লেখা শেষ হয়েছে বুধবার। ২.০৯.২০২০ তারিখে। এই তারিখের এক জায়গায় তিনি লিখেছেন: ‘২০২১ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর। এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর বছর। এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। (যদিও এটি চূড়ান্ত হতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে)। এ বছর প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার বছর। এ সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খাদ্যঘাটতি আর অর্থনৈতিক মন্দা দেখা গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ তা অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছে। বিভিন্ন সময় তাঁর দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজগুলো ঠিক সময়ে, ঠিক সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ এ সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ সমর্থ হয়েছে। এ বছর জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা খাদ্যঘাটতির ইঙ্গিত দিলেও
আল্লাহর অশেষ রহমতে বাংলাদেশের কৃষকদের ধারাবাহিক উৎপাদন আমাদের সহায় হয়েছে।’

করোনাকালের মহামারির সময় হলেও তিনি অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে বইয়ের লেখা শেষ করেছেন। শেষের বাক্য কয়টি জীবন-সত্যের বড় জায়গা। খুব ভালো লেগেছে বইটি পড়তে।

এর আগে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন শাইখ সিরাজ। সব কটি কৃষিনির্ভর। যেমন ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’, ‘কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা’, ‘পাল্টে যাওয়া কৃষি’ এমন আরও কয়েকটি বই। নিজের এই বিষয়ের বাইরে লিখিত ‘করোনাকালে বহতা জীবন’। এখানেই তিনি একজন লেখক হিসেবেও পরিচিত হয়েছেন। এই আবিষ্কার আনন্দের এবং গৌরবের। লেখক: সাহিত্যিক, সূত্র : আজকের তানোর

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.