শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৫২ pm
মো. মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিবেদক :
সমবায়ে গড়ব দেশ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে বর্ণ্যাঢ্য আয়োজনে রাজশাহীতে পালিত হলো ৫৩ তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২৪। এ উপলক্ষে শনিবার (২ নভেম্বর) সকালে গভ: ল্যাবরেটরি হাই স্কুল মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।
স্বাগত বক্তব্যে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন সমবায়ের ইতিহাস, ক্রমবিকাশ, সমবায় কার্যক্রম, অর্থনীতিতে সমবায়ের অবদান ও পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সমবায়ীর মধ্যে মো. মিজানুর রহমান, সভাপতি, উত্তরণ সেভিংস এন্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, বোয়ালিয়া, রাজশাহী সমবায় অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বক্তব্যের শুরুতে সমবায়ীদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং সমবায়ে ড. আখতার হামিদ খানের অবদান তুলে ধরেন। সমবায়ের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সম্ভাবনা ব্যক্ত করেন। কৃষি সমবায়কে এগিয়ে নিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এরআগে সকালে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গভর্ণমেন্ট ল্যাবরেটরী হাইস্কুলে মিলনায়তন প্রাঙ্গনে এসে শেষ হয়। পরে জাতীয় ও সমবায় পতাকা উত্তোলন শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার রাজশাহী বলেন, বহুকাল হতে সমবায় ধারণা বিস্তৃত। সংবিধানের ১৩(খ) অনুচ্ছেদে সমবায় মালিকানার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ন্যায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে সমবায় গড়ে তুলতে হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সমবায়ের কোনো বিকল্প নেই।
বিশেষ অতিথি আরএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বাণ চাকমা বলেন- ‘একতায় উন্নয়ন, বিচ্ছেদে পতন’। পাহাড়ি এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমবায়ের ভিত্তিতে মানুষ একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসে। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সম্মিলিতভাবে গড়ে তোলে সমবায়। কিন্তু সমতলের তুলনায় পাহাড়ি এলাকায় সমবায়ের সংখ্যা খুবই নগণ্য। অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সমবায়ের আরও বিস্তৃতি ঘটানো প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সরোয়ার জাহান বলেন, ৫টি লাঠি এক এক অতি সহজেই ভাঙ্গা যায় কিন্তু লাঠিগুলো একত্রে থাকলে তা সহজে ভাঙ্গা যায় না। সমবায় হলো একটি প্লাটফর্ম যা সবাইকে একত্রিত করতে পারে এবং কেবল একত্রিত থাকলেই দেশ তথা অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, বিভাগীয় কমিশনার, রাজশাহী শুরুতে জুলাই এর বিপ্লবে আবু সাইদসহ সকল শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, সমবায়ের মতো বেস্ট মার্কেটিং প্রেসেস আর দ্বিতীয়টি নেই। পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, ব্যবসায়িক প্রযুক্তি ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমবায় মার্কেট চেইন গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংককে সক্রিয় করতে হবে। তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রয়োজন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সমবায়।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে সমবায় বিভাগ রাজশাহীর যুগ্মনিবন্ধক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ১৯০৪ সাল হতে অদ্যবধি সমবায় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশে ৩৫ ক্যাটাগরির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সমবায় সমিতি রয়েছে। বর্তমানে সমবায়ে দৈনিক সঞ্চয় প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। সমবায় থেকে শুধু ঋণ গ্রহণ করে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হবে। সবাই শুধু চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আগ্রহী করতে হবে। সবাইকে প্রকৃত সমবায়ী হতে হবে। সমবায়ে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠান শেষে ‘জাতীয় সমবায় পুরস্কার ২০২৩’ এর জন্য রাজশাহীর বিভাগীয় বাছাই কমিটি কর্তৃক মনোনীত মো. মিজানুর রহমান, সভাপতি, উত্তরণ সেভিংস এ্যান্ড ক্রেডিট অপারেটিভ সোসাইটি লি. বোয়ালিয়া, রাজশাহীকে ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন পরিদর্শক সুব্রত কুমার রায় সহকারী পরিদর্শক বিউটি রানী সাহা।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সমবায় বিভাগের উপনিবন্ধক মোছা. শাহানা শিল্পী, জেলা সমবায় অফিসার মোঃ আকরাম হোসেন, মেট্রোপলিটন থানা সমবায় অফিসার, বোয়ালিয়া মোছা. নাছিমা খাতুন এবং অবসরপ্রাপ্ত সমবায় কর্মকর্তাবৃন্দ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা ও সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও সমবায়ী সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। রা/অ