শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:১৭ pm
ডেস্ক রির্পোট :
পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের ক্ষণগণনা চলছে। আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। তাই তো স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে শেষ মুহূর্তে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য মানুষ তাদের কর্মক্ষেত্র ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছে জন্মভিটায়। কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে কিংবা লঞ্চে। ট্রেন ছাড়ছে নির্ধারিত সময়ে। লঞ্চে নেই চিরচেনা যাত্রীর চাপ। তবে ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গাড়ির চাপ বেশি ছিল।
ঈদের ছুটির দ্বিতীয় দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এই দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বাস টার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোতে যাত্রীর চাপ ছিল না। গাবতলী এক রকম ফাঁকাই ছিল, ঘরমুখী মানুষের তেমন ভিড় ছিল না বাস কাউন্টারগুলোতে। বেশির ভাগ বাস নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। তবে বৃহস্পতিবার বিকেলের পরে শিল্পাঞ্চলের সব পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় একযোগে এলাকায় ফিরছেন পোশাকশ্রমিকরা। এতে করে সড়কে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে যানবাহনের চাপ বাড়ায় মহাসড়কে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। কোথাও আবার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত প্রায় ১৮-২০ কিলোমিটার সড়কে ধীরগতির সৃষ্টি হয়। আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের বাইপাইল থেকে জামগড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। এ ছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নবীনগর থেকে বিশমাইল পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে।
শ্যামলী এন আর পরিবহনের রোড ম্যানেজার (উত্তরাঞ্চল) সব্যসাচী কুমার ঘোষ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে সাভার এলাকায় যানজটের খবর পেয়েছি। টাঙ্গাইলে বাসের গতি কিছুটা কমেছে যানবাহনের চাপে’। তবে গণপরিবহনের পাশাপাশি ঘরমুখী মানুষগুলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করেও গন্তব্যে ছুটছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা যে পরিকল্পনা করেছিলাম সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। সড়কে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সব কর্মকর্তা মাঠে আছে। কোথাও যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়নি। নির্বিঘ্ন হচ্ছে এবারের সড়কপথের ঈদযাত্রা।’
সেতুতে মোটরসাইকেলের চাপ :
প্রায় সাড়ে ৯ মাস পর স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে পদ্মা পার হচ্ছে মোটরসাইকেল।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই টোলপ্লাজার সামনে জড়ো হতে থাকেন মোটরসাইকেল চালকরা। সকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে টোল পরিশোধ করে আনুষ্ঠানিকভাবে মোটরসাইকেল পারাপার শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকেই সেতুতে মোটরসাইকেল পারের অপেক্ষায় ছিল হাজারও বাইকার।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ভিখারুদ্দৌলা চৌধুরী জানান, সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৭৯টি মোটরসাইকেল পদ্মা সেতু পারাপার হয়েছে। সকালের দিকে ভিড় বেশি থাকায় আলাদা দুটি বুথে টোল আদায় করা হয়েছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুতেও মোটরসাইকেল চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল কয়েক দিনের চেয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী পরিবহন সেতু পার হয়েছে ২০ হাজার ৮২০টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার ১০০ টাকা।
এ ছাড়া উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী পরিবহন সেতু পার হয়েছে ১৫ হাজার ২৪৯টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ৩০০ টাকা। ফলে সেতুতে মোট টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭১ লাখ ৯৫ হাজার ৪০০ টাকা।
বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজা পরিদর্শনে গিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নিয়ম না মানলে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে । পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার’।
ট্রেনে অন্য রকম ঈদযাত্রা :
ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই নির্বিঘ্ন চলছে ট্রেনের যাত্রা। যাত্রীদের তেমন একটা চাপ না থাকায় কমলাপুর রেলস্টেশন কিছুটা ফাঁকা দেখা গেছে। বেশির ভাগ ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। তাই বেশির ভাগ যাত্রীই খুশি মনে বাড়ির পথ ধরেছেন। ফলে রেলপথে ঈদযাত্রা এবার স্বস্তিতেই শেষ হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার কমলাপুর থেকে ৫৫ জোড়া ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। তবে যান্ত্রিক ত্রুটিন কারণে সাড়ে ৩ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছে চট্টগ্রাম অভিমুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি। সকাল ৭টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ৩ ঘণ্টা বিলম্বে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাড়ে এ ট্রেন।
স্টেশনে প্রবেশ করতে হলে তিন ধাপে চেক করা হচ্ছে টিকিট। তাই বিনা টিকিটের যাত্রী আর হকারদের উটকো ভিড় নেই রেলওয়ে প্লাটফর্মে। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ না থাকায় প্রায় সব ট্রেনই ছেড়ে গেছে সময় মেনে। ছাদে আর গেটে যাত্রীদের ভিড় না থাকায় সিট খুঁজে পেতে সময় লাগেনি কারও। যাদের টিকিট নেই তাদের স্ট্যাডিং টিকিট দেয়া হচ্ছে।
সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, ট্রেনে এমন চিত্র দেখা যায় না। অন্য রকম একটা ঈদযাত্রা হচ্ছে। ট্রেনের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে না । ট্রেনযাত্রায় কোনো ভোগান্তি নেই এবার।
এদিকে যেসব যাত্রী অনলাইনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটতে পারেননি তারা স্টেশনে এসে স্ট্যান্ডিং টিকিট পাচ্ছেন। মো. ইসমাইল আলী নামেক এক যাত্রী বলেন, ‘আমি অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটতে পারিনি। স্টেশনে এসে তাই স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটলাম। চট্টগ্রামে যাচ্ছি ঈদ করতে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘যাত্রীদের ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে এবার বাড়তি প্রস্তুতি ছিল আমাদের। ঈদযাত্রার প্রথম দিন থেকেই টিকিট প্রদর্শন করে স্টেশনে প্রবেশ করতে হচ্ছে যাত্রীদের। টিকিট ছাড়া স্টেশনেই প্রবেশ করার সুযোগ নেই কারও। ফলে এবার ট্রেনে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হয়েছে’।
পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহন স্বস্তিতে পার হচ্ছে :
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখী মানুষ স্বস্তিতে পাটুরিয়া ঘাট হয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছে। যাত্রীবাহী পরিবহন কম থাকায় অধিকাংশ ফেরি অলস সময় পার করছে। ঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো আসা মাত্রই সরাসরি ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। তবে কাটা গাড়ির (লোকাল) কিছুটা চাপ রয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা সেক্টরের ডিজিএম শাহ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘সকাল থেকেই যানবাহনের তেমন চাপ নেই পাটুরিয়া ঘাট পয়েন্টে। তবে কাটা গাড়ির যাত্রীরা পার হচ্ছেন ফেরিতে করে। যাত্রীবাহী পরিবহন না থাকায় অপেক্ষাকৃত অন্য যানবাহনগুলোকে পার করা হচ্ছে।
সন্ধ্যায় সদরঘাটে ভিড় :
দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে যাত্রীর চাপ। সকালে চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী পল্টুনে দেখা যায় যাত্রীদের ভিড়। তবে রোদের তাপ বাড়ায় দুপুরের দিকে ঘাটে দেখা মেলেনি যাত্রীর। বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামার মুহূর্তে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে। বিকেলে যাত্রীদের বেশির ভাগই বরিশালগামী লঞ্চগুলোতে ভিড় করেছেন। এ ছাড়া পটুয়াখালী বগা ইলিশা এসব রুটেও যাত্রীর চাপ দেখা যায়। তবে বরিশাল রুটের যাত্রী বরাবরের মতোই কম ছিল। পর্যাপ্ত লঞ্চ থাকায় অনেকটা আরামদায়কভাবে বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে আশা করছেন যাত্রীরা।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও এর আশপাশের এলাকায় এদিন বিকেলে সিএনজি, রিকশা ও প্রাইভেটকারের প্রচণ্ড জ্যামের সৃষ্টি হয়। ঘরমুখী যাত্রীদের ব্যাগ-বস্তা হাতে ঘাটের দিকে আসতে দেখা যায়। কেউ যাচ্ছেন পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে, আবার কেউবা একা। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরাই যেন তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
পটুয়াখালীর যাত্রী রাসেল শিকদার বলেন, ‘ঢাকায় প্রচণ্ড গরম। তাই ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভাড়া সামান্য বেশি দিয়ে কেবিন পেয়েছি। ঈদের সময় ভাড়া তো একটু বেশি নেবেই। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করব, এটাই আনন্দ।
এদিকে ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি সুরভী-৯ লঞ্চের স্টাফ আমিরুল ইসলাম জানান, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে আমাদের যাত্রীসংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। ঈদ উপলক্ষে যাত্রী বেশ বেড়েছে। বেশির ভাগ কেবিন আগে থেকেই বুকিং দেয়ায় খালি যাচ্ছে না। সূত্র : দৈনিক বাংলা