রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:২৩ am

সংবাদ শিরোনাম ::
কম্পিউটার কী বোর্ডের মাধ্যমে রাজশাহীতে পাহাড়িয়াদের মাতৃভাষার লিখন পঠন কার্যক্রম উদ্বোধন গোদাগাড়ীতে প্লাজমা ফাউন্ডেশনের ৯ম তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন আমবাগান থেকে বাঘায় দিনমুজুরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার নগরীতে জেলা কৃষকলীগ সভাপতি তাজবুল ইসলামসহ ১৫ জন গ্রেপ্তার নাচোলে মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের ১৪৮তম শাখা উদ্বোধন গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েম চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা : সাকি তানোরে আলু বীজে মহাসিন্ডিকেট, দ্বিগুন দামে দিশেহারা চাষীরা! দুর্গাপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিক সরকারের দাফন সম্পন্ন দুর্গাপুরে বিএনপি’র আয়োজনে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপিত মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ! রাজু আহমেদ তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না
তানোরে আলু বীজে মহাসিন্ডিকেট, দ্বিগুন দামে দিশেহারা চাষীরা!

তানোরে আলু বীজে মহাসিন্ডিকেট, দ্বিগুন দামে দিশেহারা চাষীরা!

Oplus_131072

আব্দুস সবুর, ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক :
উত্তরবঙ্গের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি আলুচাষ হয় রাজশাহীর তানোরে। চলতি মৌসুমে আলু চাষের জন্য বীজ আলু নিয়ে শুরু হয়েছে মহাসিন্ডিকেট। এসিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও নেতারা। যার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন। ব্র্যাকের বীজ আলু পেতে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন টাকা। তারপরও মিলছে না ব্র্যাকের আলু বীজ। শুধু আলু বীজ নয় সার নিয়েও শুরু হয়েছে লংকাকান্ড।

জানা গেছে, উপজেলার প্রায় প্রতিটি মাঠে রোপা আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। শেষ হওয়া মাত্রই আলু রোপনের জন্য জমি চাষ চলছে। কিন্তু ব্র্যাক আলুর বীজ কোনভাবেই কৃষকরা পাচ্ছে না। সম্প্রতি তালন্দ বাজারে ব্র্যাক আলুর বীজ ডিলার শাহিনের দোকানে বীজ পেতে ভোর রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে বিকেলের দিকে এক বস্তা করে বীজ ন্যায্য মূল্যে কিনতে পারেন। সেটা একেবারে অপ্রতুল।

ব্র্যাক আলুর বীজ ডিলার শাহিন। তার মোকাম তালন্দ বাজারে। তিনি গোকুল মাদ্রাসার শিক্ষক। শাহিন ব্র্যাক বীজ নিয়ে মহা কারসাজি করেছেন বলে অহরহ অভিযোগ। রাতের আধারে দ্বিগুণ দামে প্রান্তিক চাষীদের কাছে বিক্রি না করে ট্র্যাকের ট্রাক বীজ কালোবাজারি করেছেন। গত মঙ্গলবার শীতের সকালে ট্রাকে করে সরনজাই ইউপির দিকে পাঁচার করেন তার ভাই। শাহিনের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করলে পরে বলেন আমি অসুস্থ পরে কথা বলছি, বলে মোবাইল বন্ধ রাখেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার গোকুল মাদ্রাসায় গিয়ে শাহিন মাস্টারের খোঁজ করা হলে সুপার আব্দুল হামিদ জানান অসুস্থতার কারন দেখিয়ে চারদিনের ছুটি নিয়েছেন। তিনি নাকি গত প্রায় ৮/১০ দিন ধরে অনুপস্থিত এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন।

কৃষকদের ভাষ্য, শাহিন মাস্টার ব্র্যাকের বীজ ডিলার হয়ে প্রতি নিয়তই রাতের আধারে বীজ পাঁচার করেছেন। কারন ব্র্যাকের বীজ ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু ৭/৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি গত প্রায় ১০/১২ দিন ধরে বিভিন্ন তালবাহানায় আত্মগোপনে আছে। বন্ধ রয়েছে তার মোবাইল নম্বর।

তালন্দ এলাকার আলু চাষি সোহেল জানান, তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করবেন। কিন্তু একবস্তাও বীজ মিলেনি। তিনি আরো জানান, হাফিজুর ৭ বিঘা জমির জন্য বীজ পায়নি। ইসারুল ইসলাম ৬ বিঘা জমিতে, সলিম ৫ বিঘা জমিতে, আশরাফুল ৩ বিঘা জমির জন্য বীজ পায়নি। শুধু বীজ না সারও মিলছে না সঠিক দামে।

উপজেলার কামারগাঁ ইউপির ছাঐড় গ্রামের আব্দুল্লাহ জানান, ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করব। কিন্তু গত প্রায় সপ্তাহ ধরে খোঁজ করে এক বস্তাও বীজ কিনতে পারেনি। শুধু আমি নয় আমার ভাই আইয়ুব ৫ বিঘা, নমির ৩ বিঘা, এমদাদুল আড়াই বিঘা, বিপুল ৬ বিঘা, মোহাম্মাদ আলীপুর গ্রামের সামিউল ৫ বিঘা, মোকলেসুর ২ বিঘা, মান্নান ২ বিঘা,সাফিউল দেড় বিঘা, হাতিনান্দা গ্রামের তমিজ ১০ বিঘা জমির জন্য তীল পরিমান বীজ পায়নি।

তারা জানান, আমরা বীজ না পেলেও প্রতিনিয়তই দ্বিগুণ দামে বীজ কিনছেন মৌসুমি চাষিরা। আমরা অল্প পরিমানে নিজস্ব জমিতে আলুর চাষ করব এজন্য আমাদের মত প্রান্তিক কৃষকদের বীজ দেয়া হচ্ছে না। কারন দ্বিগুণ দাম তো দিতে পারব না। শুধু বীজ নয়, সার পাওয়ায় কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ন্যায্য দামে কোন কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো বা আলু চাষ করতে পারব কি না সন্দেহাতীত।

গত মঙ্গলবার তানোরে আসেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফিয়া আখতার। তিনি উপজেলা সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক নেতা ও সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় সেখানে আলুর বীজ ও সার নিয়ে মহা কারসাজির বিষয়ে ডিসিকে অবহিত করা হয়। সার বীজ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদের নিকট জানতে চান ডিসি। কৃষি অফিসার দায়সারা অফিসিয়াল বক্তব্য দিয়ে মুক্ত হন। তার বক্তব্যে কোন সমাধান ছিল না।

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি অফিসের মাঠকর্মী বা বিএস রয়েছে। তাদের তো হিসেব থাকার কথা কোন এলাকায় কত কৃষক আলু রোপন করবেন। আলু রোপনের জন্য কতটুকু বীজ সারের প্রয়োজন। কিন্তু বিএসরা মাঠে না এসে ঘরে বসেই হিসেব করে থাকে। যার কারনে প্রতি বছর আলু রোপনের আগে চলে সিন্ডিকেট। আলু রোপনের জন্য কতটুকু বীজ কৃষকদের ঘরে মজুদ আছে এবং কি পরিমান আমদানি করতে হবে। এসব নিয়ে কাজ করলে কেউ সিন্ডিকেট করতে পারবে না। সেটা না করে কৃষি অফিস থেকেই বলা হচ্ছে বাহির থেকে সার আনতে হবে, নইলে ঘাটতি পুরুন হবে না। এজন্য সার কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। বিসিআইসি থেকে শুরু করে বিএডিসি ডিলারদের একটাই কথা কৃষি অফিসের অনুমতিতে বাড়তি দামে কিনে এনেছি, বাড়তি দামে বিক্রি করতে হবে। চাইলে নাও, না চাইলে চলে যাও। প্রতিনিয়তই পার্শ্ববর্তী উপজেলা মোহনপুর কেশরহাট, ধুরইল বাজার, মান্দা উপজেলার, সাবাইহাট, দেলুয়াবাড়ি, চৌবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাই পথে সার আনছেন ছোট বড় ব্যবসায়ীরা। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে প্রতি আলু মৌসুমে তারা কারসাজি করতে এক হয়ে যান। এসব এলাকা থেকে ব্র্যাকের আলুর বীজ আসছে প্রতিনিয়তই।

আমরা মনে করেছিলাম শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে, দেশে কোন সিন্ডিকেট হবে না। কিন্তু বাস্তবে এর পুরোটাই বিপরীত। এ বছর যে পরিমান সিন্ডিকেট হয়েছে বিগত বছরে এ পরিমান সিন্ডিকেট হয়নি। বীজের সিন্ডিকেটের কারণে অনেকেই খাওয়ার আলু রিপ্যাক করে বিক্রি করছে। অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকদের ফুঁসিয়ে তুলতে কৃষকদের বীজ সার নিয়ে মহা কারসাজি করছেন দোসররা। কারন সেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও দোসররা বহাল তবিয়তে থেকে সিন্ডিকেট করছেন। বীজ আলু সিন্ডিকেট হচ্ছে, তালন্দ, কাশিম বাজার, কালীগঞ্জ, থানা মোড়, চৌবাড়িয়া, কেশরহাট, ধূরইল ও সাপাইহাটসহ বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র মাঝারি সার কীটনাশক ব্যবাসীরা কারসাজি করছেন।

তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, এবার উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জমি রোপনের জন্য বীজের প্রয়োজন ২৯ হাজার ৫১০ মেট্রিকটন। তবে, কি পরিমান বীজ মজুদ আছে এবং কি পরিমান আমদানি করতে হবে জানতে চাইলে কোন সদ উত্তর দিতে পারেন নি। ডিলার সম্পর্কেও তেমন কোন তথ্য নেই কৃষি অফিসে। অবশ্য সবকিছু দ্রুত সময়ের মধ্যে কেটে যাবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আশাবাদী তিনি। রা/অ

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.