বৃহস্পতিবর, ১২ িসেম্র ২০২৪, সময় : ০২:০৭ am
ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পতনের পর থেকে আত্মগোপনে থাকা দূর্নীতিবাজ শিক্ষকদের নিজ পকেটে রাখতে ধারাবাহিক সভা শুরু করেছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিজান। যেসব শিক্ষকরা আ.লীগের পদে থেকে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন সেই সকল শিক্ষকদের নিজ পকেটে বন্ধি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন মিজান।
তার এমন কর্মকান্ডে সিনিয়র নেতারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও মিজানের কিশোর ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পারছেন না। আবার অনেকেই মনে করছেন বিগত সরকারের সাবেক এমপি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নার স্টাইলে শিক্ষকদের নিয়ে নতুনরুপে রাজনীতি শুরু করেছেন। ফলে শিক্ষকদের নিয়ে এমন রাজনীতি থেকে বিরত থাকতে কেন্দ্রীয় বিএনপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সিনিয়র নেতারা। তার লাগাম টানতে না পারলে ভবিষ্যতে তানোর বিএনপির আ.লীগের চেয়েও খারাপ অবস্থার কথা বলছেন অনেকে।
জানা গেছে, সম্প্রতি ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতিকে হাতে নিয়ে আগের কমিটি পরিবর্তন করে নতুন আহবায়ক কমিটি করে দেন মিজান। কমিটির নতুন আহবায়ক করেন, তানোর পৌরসভা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম মুন্টুকে। আগের কমিটির সভাপতি ছিলেন, আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক চাপড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পৌর আ.লীগের সভাপতি আকচা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আসলাম উদ্দিন এবং মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম সেলিম ও পারিশো দূর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষক লীগের সভাপতি রাম কমল সাহা।
তারা শিক্ষক সমিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এদের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রায় ২৫ জনের মত শিক্ষক-কর্মচারী অবসর জনিত ভাতা পাননি সমিতি থেকে। একয়জন শিক্ষকের নামে আদালতে মামলা করেন বিএনপির দুই নেতা। গত মাসের ২৬ সেপ্টেম্বর এসব শিক্ষকদের নিয়ে সভা করেন মিজান। সভার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
চলতি মাসের ২ অক্টোবর বুধবার কলেজ শিক্ষক সমিতিকে নিয়ে কালিগঞ্জহাট ডিগ্রি কলেজে সভা করেন এই বিতর্কিত বিএনপি নেতা মিজান। আগের কমিটি বিলুপ্ত করে প্রভাষক আব্দুল খালেককে আহবায়ক করেন। তিনি মিজানের একান্ত অনুসারী। বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতিকে নিয়ে সভাও করা হয়।
সুত্র জানায়, বিগত হাসিনা সরকারের সময় সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নার সার্বিক সহযোগিতা ও ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে স্কুল ও মাদ্রাসা এবং কলেজ শিক্ষক সমিতি গঠন করেন। সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরী। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে ভোটে ব্যাপক কারচুপি করে পছন্দের প্রার্থী কে বিজয় করার সব ব্যবস্থা করতেন।
একাধিক শিক্ষকরা জানান, দেশে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার। তারপরও কেন আমাদেরকে রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিগত প্রায় ১৫ বছরে আমাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন সাবেক এমপি ও তার অনুগত শিক্ষক নেতারা। আর এখন একই কায়দায় ব্যবহার করছেন বিএনপি নেতা মিজান। আমরা কেন রাজনীতিতে ব্যবহার হব। অতীতে শিক্ষকরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন বলে সরকার পতনের পর অনেকে আত্মগোপনে ছিলেন এবং মামলার আসামিও হতে হয়েছে। বিশেষ করে মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা দরকার। কলেজের ক্ষেত্রে আলাদা বিষয়। কারণ রাজনীতির কারণেই উপজেলায় শিক্ষা ব্যবস্থাকে অতীতে ধ্বংস করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষক সমিতি গঠন হয়েছিল সাবেক এমপির খায়েশ পুরুনের জন্য। এখন কি মিজান আমাদেরকে ব্যবহার করে তার রাজনৈতিক খায়েশ পুরুন করতে চাই বলে প্রশ্ন শিক্ষক সমাজের। আমরা চাকুরি করছি বলে কি রাজনৈতিক নেতার ইচ্ছে পুরুন করতে হবে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এক দানব নামের জমিদার বিদায় হয়েছেন তো আরেক দানব ভর করা শুরু করেছেন। মিজান সভা করছেন আর বিএনপির অন্য গ্রুপের নেতারা আজেবাজে কথা লিখছেন ফেসবুকে। তাহলে আমাদের সম্মান কোথায়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই সবকিছুই হত। এই সমিতি শিক্ষকদের পাশে থাকত। অবসর জনিত কারণে ভাতা পেতেও ভোগান্তিতে পড়তে হত না। উপজেলায় প্রায় আটটির মত মাধ্যমিক স্কুলে সাবেক এমপির সমিতিতে ছিল না। না থাকার কারণে অনেক নির্যাতন সইতে হয়েছে। তারাই সঠিক সিদ্ধান্তে ছিলেন। উপজেলা শিক্ষক সমিতি এক রকম প্রশ্ন ও গাইড বাণিজ্য করে, আর বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি আরেক রকমের প্রশ্ন এবং গাইড দেয়। এভাবে শিক্ষকদের মাঝে দ্বন্দ্ব ফারাক তৈরি করেছিল সাবেক এমপি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নতুন আহবায়ক রবিউল ইসলাম মুন্টু বলেন, আ.লীগ সরকার পতনের পর সমিতির দায়িত্বশীলরা আমাকে বুঝে দেন। আমি শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক। সমিতির নাকি কোটি টাকা লোপাট হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, হিসেব হয়নি হলে বোঝা যাবে। যদি দূর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন শিক্ষকরা। বিএনপি নেতা মিজানের কথামত নাকি সমিতির দায়িত্ব নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদ উত্তর দেননি। তবে, এব্যাপারে জানতে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিজানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি। রা/অ