শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:১৫ pm
ডেস্ক রির্পোট :
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আরও অনেক থানার মতো গত ৫ আগস্ট হামলার শিকার হয় রাজধানীর পল্লবী থানাও। টানা তিন দিন লুটপাট চলে সেখানে। পুলিশশূন্য থানায় রুমে রুমে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নষ্ট ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে যায় লুটপাটকারীরা। অস্ত্র, গুলি ও মোটরসাইকেলও লুট হয়। ভাঙচুর করা হয় টহল গাড়ি। ওই দিন প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হয়েছেন থানার বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) পল্লবী থানা ঘুরে দেখা যায়, থানার ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামত করা হচ্ছে। এখন থানার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। থানায় কর্মরত বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য নতুন বদলি হয়ে এখানে এসেছেন। ৫ আগস্টের আগে থেকে এই থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সেদিনের হামলার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানা যায়। তারা জানান, ৫ আগস্ট দুপুর ২টার পর থানায় হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনগণ। প্রাণ বাঁচাতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে প্রায় ১৭ জন হামলার শিকার হন। গুরুতর আহতদের মধ্যে চার জন এখনও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাননি।
প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আল্লাহর মেহেরবানি ছাড়া ওইদিন হামলার শিকার হওয়া পুলিশ সদস্যদের জীবন নিয়ে ফেরা অসম্ভব ছিল। সাপ পেটানোর মতো করে তাদের পেটানো হয়।’
পুলিশ সদস্যরা জানান, ৫ আগস্ট থানা থেকে পুলিশের ২টি শটগান, ১টি পিস্তল লুট হয়েছে। থানায় জমা থাকা ব্যক্তিগত ২টি রিভলবার ও ১টি বন্দুক, রাইফেলের গুলির বাক্স, যেখানে পিস্তলের ১৪৯৮ রাউন্ড ও শটগানের ৫৭ রাউন্ড গুলি ছিল, তাও লুট হয়। ৫ আগস্টের পরের দুই দিনও থানা থেকে যে যা পারে লুটে নিয়ে গেছে।
এছাড়া ঘটনার দিন পুলিশের ৮টি টহল গাড়ি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়। সেগুলো পরবর্তীতে রাজারবাগে পাঠানো হয়েছে। লুট হয়েছে ২০টির মতো মোটরসাইকেল, যার অধিকাংশই ছিল পুলিশ সদস্যদের নিজস্ব।
কাজে ফিরলেও স্বাভাবিক হয়নি অনেক কিছুই ৫ আগস্টের প্রায় তিন দিন পর পল্লবী থানায় পুলিশ সদস্যরা আসতে শুরু করেন। এর মাঝে অনেককে বদলি করে নতুন সদস্যদের আনা হয়। তবু মাঠে জনগণের সঙ্গে এক ধরনের দূরত্ব রয়ে গেছে বলে জানান পুলিশ সদস্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, জনগণের মনে পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা কিছুটা কমে গিয়েছে। অভিযোগ পেয়ে কোথাও গেলেও মনে হচ্ছে, মানুষ কেন জানি বিশ্বাস রাখতে পারছেন না পুলিশের ওপর।
অভিযোগ আসা বেড়েছে পল্লবী থানার কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে নানা অভিযোগ আসতে থাকে। এর মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ, স্থানীয় কোন্দল, মারামারি, মাদক, ধর্ষণ ও পারিবারিক কলহের অভিযোগ আসছে। গত দুই মাসে ধর্ষণ, মারামারি, জমি সংক্রান্ত ও মাদক সংশ্লিষ্টসহ মোট ৫০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এ থানায়। এ ছাড়াও পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সামাজিক অভিযোগ, হুমকি ও বিভিন্ন কিছু হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগে ৩ হাজার ১৫২টি সাধারণ ডায়রি (জিডি) জমা পড়েছে। গড়ে প্রতিদিন ৫০টির বেশি জিডি তদন্তযোগ্য বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
থানা সূত্রে জানা যায়, এ থানাভুক্ত এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ ও ঘিঞ্জি। এ কারণে অপরাধ প্রবণতাও বেশি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিগত সময়ে এই পল্লবী থানায় ১৫০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য কর্মরত ছিলেন। তবে সরকারের পটপরিবর্তনের পর নানা অভিযোগে ও পুলিশের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে পুরনো পুলিশ সদস্যদের বদলি করে দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে ওসি, পরিদর্শক (তদন্ত) ও ১৪ জন উপপরিদর্শকসহ মোট ৬০ জন নতুন পুলিশ সদস্য জয়েন করেছেন। বাকিদের বদলির অর্ডার হয়ে গেছে। পর্যায়ক্রমে নতুন পুলিশ সদস্যরা যোগ দিচ্ছেন।
ডিউটি অফিসার মাহফুজ বলেন, আমি গত ১৮ সেপ্টেম্বর এসেছি। এই পর্যন্ত যেসব অভিযোগ আসতে দেখেছি তা নিয়মিত থানায় আসে। প্রতারণা, হারানো, হয়রানি এই ধরনের অভিযোগ বেশি।
পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আগের তুলনায় কার্যক্রম অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মধ্য থেকে ভীতি কাটছে, তাদের মনোবলও বেড়েছে। ছোটখাটো ঘটনায় পুলিশের একটি টিম দিয়েই কাজ করা যাচ্ছে। তবে মারামারি বা বড় ধরনের কোনও ঘটনা মোকাবিলা বা নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আগের ৯০ ভাগ পুলিশ সদস্যদের বদলির অর্ডার হয়ে আছে। পর্যায়ক্রমে নতুন পুলিশ সদস্যরা জয়েন করছেন। সবাই যোগ দিলে থানার কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। থানা এলাকার বাসিন্দারা আমাদের সাদরে গ্রহণ করেছেন। বাসিন্দাদের সঙ্গে বর্তমানে পুলিশের বেশ ভালো সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। শুধু কথায় নয়, আমরা সত্যিকার অর্থেই জনগণের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করছি। পুলিশের সঙ্গে জনগণের সুসম্পর্ক স্থাপনের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এছাড়াও জনসাধারণের মধ্যে পুলিশের প্রতি যে ক্ষোভ আছে তা দূর করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ সদস্যদেরও মনোবল শক্ত ও সেবার মান বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নাগরিক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে থানা এলাকা সহজে মনিটরিং করা যাবে। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন