শুক্রবার, ০৪ অক্টোব ২০২৪, সময় : ০৫:০১ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিস অনিয়ম-দূর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্যর আখড়ায় পরিণত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অফিসটি এমন অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যর আখড়ায় পরিণত হলেও দেখার যেন কেউ নেই। প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
ঘুষ ছাড়া দলিল সই করেন না সাব-রেজিস্টার। এ অফিসে একেকটি দলিলে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে ঘুষের লেনদেন হয়। দলিলের সার্টিফাইড কপি, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি থেকে বিক্রয় কবলা দলিল রেজিষ্ট্রি, অফিস খরচসহ নানান কথা বলে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগিরা।
লাইসেন্স বাতিল হওয়ার শঙ্কায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দলিল লেখক বলেন, বন্টননামা দলিল করেন না, সাব-রেজিস্ট্রার বিক্রয় কবলা দলিল প্রতি ১ হাজার ৪০০ টাকা, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বলে বিক্রয় কবলা দলিল প্রতি ৩ হাজার টাকা, সার্টিফাইড কপি প্রতি ৮০০ টাকা ও দলিল প্রতি অফিস খরচ ৪০০ টাকা নেয়া হয়।
প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৯০০টি দলিল রেজিষ্ট্রি হয় এ অফিসে। এতে মাসে প্রায় ১২/১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেন সাব-রেজিষ্ট্রার। গোদাগাড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গত ২৩/২৪ অর্থ বছরে মোট দলিল হয়েছে ১১ হাজার ১৪৫টি। এতে করে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৩ কোটি ৮১ লক্ষ ১৪ হাজার ৫৯৪ টাকা। রাজস্ব আদায় ছাড়া জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা অসহায় গরীব মানুষের পকেট কেটে ঘুষ বাণিজ্য করেছেন সাব-রেজিষ্ট্রার প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
সাব-রেজিস্ট্রার সারা দিন কতটি দলিল রেজিষ্ট্রি করেছেন তার হিসাব করে দিন শেষে ঘুষের টাকা নিজে বহন না করে বাড়ী চলে যান। তিনি বাড়ী চলে গেলেও দলিল প্রতি ঘুষের টাকাগুলো তার একান্ত সহকারি নৈশপ্রহরী ব্যাগে ভরে তাঁর বাড়ীতে পৌছে দেন বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। দলিল লেখকের তথ্য মতে প্রতি সপ্তাহের ৩ দিনে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন সাব-রেজিস্ট্রার। সমস্ত ঘুষের টাকা নৈশপ্রহরীর মাধ্যমে গ্রহণ করেন তিনি।
এছাড়াও জমির ত্রুটিপুর্ণ কাগজের দলিল প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে সই করে থাকেন সাব-রেজিস্ট্রার। হিসেব অনুযায়ী প্রতি মাসে ১২/ ১৫ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয় গোদাগাড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে।
ঘুষ আদায়ে সংশ্লিষ্ট এক দলিল লেখক বলেন, এ বিষয়ে নিউজ করে কোন লাভ হবে না। কারণ স্যার (সাব-রেজিস্ট্রার ) সরাসরি ঘুষ নেন না। এখানে সকল দলিল লেখক-ই এ ঘুষ লেনদেনের কাজে জড়িত আছে। আপনি কাকে ধরবেন? দলিল লেখকরা ফিসের নামে স্যারের এ টাকা আদায় করে থাকেন। আপনি ফিস না দিলে আপনার দলিল কোন দলিল লেখক লিখবে না। আপনি কোথায় দলিল লিখে রেজিষ্ট্রি করবেন? গোদাগাড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিষ্ট্রির সরকারি ফিয়ের চাট অফিসের কোথাও জুলানো নেই। যার কারণে জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা সাধারণ মানুষ জমি রেজিষ্ট্রির প্রকৃত সরকারি ফি কত টাকা তা জানতে পারে না। দলিল লেখকরা তাদের মনগড়া জমি রেজিষ্ট্রির ফি এর চাট দেখিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষের টাকাসহ অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার সাদেকুর রহমান বলেন. আমার এ অফিসে সমিতির নাম করে কেউ টাকা নিতে পারবে না। সমিতি বন্ধ করা হয়েছে। তিনি নিজে ঘুষ বাণিজ্য করেন না দাবি করে বলেন, আমার নামে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে বলেন, আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আপনার নামে যে ঘুষের টাকা নেয়া হয় সে বিষয়ে সকল দলিল লেখক বলছেন। সে ক্ষেত্রে আপনি কয় জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
একজন সাংবাদিক বলছেন, আমি গত ২০ জুলাই জমি রেজিষ্ট্রি করেছি, আমার কাছ থেকেও টাকা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কি বলবেন? তিনি উত্তর দিতে পারেননি।
গোদাগাড়ী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসসে দূর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্য বন্ধে যথাযত কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন গোদাগাড়ী উপজেলাবাসী। রা/অ