নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন আর নেই। বুধবার সোয়া ৪টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। মরহুম আবুল হোসেনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী আগে মারা যান।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, ৪টার দিকে বেসরকারি বারিন্দ্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ভাষা সৈনিক আব্দুল হোসেনকে রামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ৩২ নং ওয়ার্ডে পাঠানো হলে সেখানে পরীক্ষা নিরিক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তাদের হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।
মরহুমের বড় ছেলে আবুল হাসনাত বিদ্যুত জানান, বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে বেসরকারি বারিন্দ্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিনি জানান, ১৫ দিন থেকে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। বাসাতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার সকালে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া হয়।
আবুল হাসনাত বিদ্যুত জানান, তার বাবা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও সম্মেলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ছিলেন। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরের টিকাপাড়া মহানগর ঈদগাহ মাঠে মরহুমের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর টিকাপাড়া কবর স্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে।
এদিকে, ভাষা সৈনিক আবুল হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মাননীয় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বুধবার এক শোক বার্তায় মেয়র মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
শোক বার্তায় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে আবুল হোসেন যে অবদান রেখেছেন, জাতি তা চিরকাল গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে।
এদিকে, ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে)। শনিবার সন্ধ্যায় আরইউজে সভাপতি রফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক এক শোকবার্তায় বলেন, আবুল হোসেন ছিলেন আজন্ম যোদ্ধা। ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী। দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনেও তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য।
আরইউজে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আবুল হোসেনের মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তাঁর লড়াই ও সংগ্রাম থেকে বর্তমান প্রজন্ম শিক্ষা নেবে। তাঁর অবদান বাঙালি জাতি চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। আমরা তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
অপরদিকে, বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে রাজশাহী প্রেসক্লাব। বুধবার (৩১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা যুক্ত বিবৃতিতে এ শোক প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে প্রেসক্লাব নেতৃদ্বয় বলেন, ভাষা আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়। সেই ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে আবুল হোসেন যে অবদান রেখেছেন, জাতি তা চিরকাল গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে। তার মৃত্যুতে জাতি আরেকজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো। জাতির সূর্যসন্তানকে হারানোর এ ক্ষতি পূরণ হবার নয় বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তারা। আজকের তানোর