শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:১৩ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
অবসরপ্রাপ্ত বিএনপিপন্থী সামরিক অফিসারদের নিয়ে এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক এরশাদ বলয় গড়ার চেষ্টা করছেন। প্রেসিডেন্ট পার্কের ভেতরেই মদের জলসায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া’কে অর্থ সহায়তা চুক্তি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্ককে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রের আখড়ায় পরিণত করেছেন তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে যিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে দেখভালের নাম করে ট্রাস্টকৃত সম্পদে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জোরপূর্বক বসবাস করছেন। আর সেই সময় থেকেই প্রেসিডেন্ট পার্কে শুরু হয়েছে অসামাজিক, অনৈতিক ও সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড।
শুধু তাই নয়, রাজনীতির মোড়কে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সমাজের উঁচুতলার এক শ্রেণীর ক্ষমতালোভি ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি খুলে বসেন মদের জলসা। প্রেসিডেন্ট পার্কে প্রতি রাতেই চলে অনৈতিক ও অসামজিক কর্মকাণ্ড। কখনও কখনও এসব অপকর্মে জোরপূর্বক এরশাদপুত্র এরিককেও জড়ানোর চেষ্টা করা হয়। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট পার্কের এক মদের জলসার খণ্ডিত ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
জানা গেছে, ভিডিওটি ধারণ ও প্রকাশ করেছেন বিদিশা নিজেই। ভিডিওটি ধারণের উদ্দেশ্য ছিল, তার অপকর্মে জড়িয়ে যাওয়া মানুষগুলো যেনো কখন তার বিপক্ষে অবস্থান না নেন। এসব ভিডিও দেখিয়ে তাদের ব্লাকমেইল করতেন বিদিশা।
তিনি হাতের শক্তি বানিয়ে রাখতেন তাদের। নিজের ছকে আঁকা নীলনকশা অনুযায়ী তাদের ব্যবহার করতেন তিনি। কেউ তার কর্মকাণ্ডের বিরোধীতা করলে তাকে এসব ভিডিও দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিতেন তিনি। সম্প্রতি তেমন এক দীর্ঘ ভিডিওর খন্ডিত অংশ প্রকাশ করে তা দিয়ে তারই এক সময়কার বিশ্বস্ত এরশাদ ট্রাস্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রুবায়েত হাসান সায়েমকে ডিবি পুলিশে ধরিয়ে দেন বিদিশা। যে ভিডিওতে দেখা যায়। মদে মাতাল সায়েম, কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) শাহজাহান সিরাজ ও মেজর ওয়াদুদ, একজন আরেকজনকে গাল মন্দ করছেন।
গাসে মদ ঢালছেন আর একজন আরেকজনকে বিএনপিপন্থী লোক দাবি করে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নোংরা ভাষায় কটুকথা বলছেন। ওই সময় দূর থেকেই এসব ভিডিও করেন বিদিশা নিজে। যা পরবর্তিতে বিভিন্ন সময় ব্লাকমেইল করতে কাজে লাগান। কিন্তু বিধি বাম, এক সময় তার এসব কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে চলে যান অ্যাডভোকেট সায়েম। যিনি মদে মাতাল অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করা ওই ভাইরাল ভিডিওর মামলায় জেলে আছেন।
জানা যায়, ভাইরালকৃত ভিডিওটি বড় একটি ভিডিওর খণ্ডিত অংশ মাত্র। যেখানে মাতাল অবস্থায় হঠাৎ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন সায়েম। তার আগে পরে কি কথা হচ্ছিল মদের আড্ডার অপর দুই সহযোগি মেজর অবসরপ্রাপ্ত ওয়াদুদ ও কর্নেল শাহজাহান সিরাজের সঙ্গে, তা কিন্তু নেই। ভিডিও পর্যালোচনায় বলার অপেক্ষা থাকে না যে, ভিডিওটি শুধুমাত্র অ্যাডভোকেট রুবায়েত হাসান সায়েমকে ফাঁসাতেই ব্যবহার করেছেন বিদিশা। তবে ধারণকৃত পুরো ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া গেলে জানা যাবে আগে-পরে কি বক্তব্য বা মন্তব্য ছিল সায়েম ও তার আড্ডার সহযোগিদের।
তবে সায়েমের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বাইরে ভিডিওতে অন্য একটি তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, যা রাজনৈতিক। কর্নেল সিরাজ নিজেকে ও সায়েমকে বিএনপির লোক বলে দাবি করেন। এছাড়া আরো কিছু নোংরা অশালীন কথাবার্তা বলেন তারা। জানা যায়, মদের ওই জলসায় আরো ছিলেন মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিকদার আনিসুর রহমানসহ আরো অনেকে।
এদিকে ভিডিওর সত্যতা খুঁজতে গিয়ে পাওয়া যায় সরকার ও রাজনীতি বিরোধী লোমহর্ষক সব তথ্য। সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সচিব বরাবর হারুন অর রশিদ নামে এক মুক্তিযোদ্ধার লিখা চিঠি থেকে জানা যায় ওইসব তথ্য। এতে দেখা যায়, বিদিশা প্রেসিডেন্ট পার্কে বসে নিয়মিত সরকার ও রাজনীতি বিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে সঙ্গে লিপ্ত রয়েছেন। সরকার উৎখাত, বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে হত্যা পরিকল্পনাসহ নানা অপকর্মের তথ্য রয়েছে ওই চিঠিতে। যেখানে ওই মুক্তিযোদ্ধা তথ্য প্রমাণ হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ মাসেজের স্ক্রিন শর্ট, জিএম কাদেরকে গুলি করে হত্যা পরিকল্পনা, প্রধানমন্ত্রী, কয়েকজন মন্ত্রী ও পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে গালমন্দের ভয়েস রেকডিংয়ের সিডি কপি এবং বিভিন্ন মিটিং ও অসামাজিক কার্যক্রমের ভিডিও ক্লিপের সিডি সংযুক্ত করে মন্ত্রনালয়ে জমা দেন।
ওই চিঠিতে আরেকটি লোমহর্ষক তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়, আর তা হলো দেশে অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া’র সঙ্গে অর্থায়ন সহযোগিতার আদান প্রদান কর্মকাণ্ড চলছে বিদিশার নেতৃত্বে।
জানা যায়, নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান শামীম মাহফুজ একাধিকবার প্রেসিডেন্ট পার্কে বিদিশার সঙ্গে মিটিং করেছেন। এছাড়া সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় ও আতংক সৃষ্টি করে রাজনীতির নামে অবৈধ কমিটি বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদিশা বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ।
তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রী পরিষদ সচিবকে লিখা চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, এরশাদের মৃত্যুর পর বিদিশা সিদ্দিক নিজেকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। যার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। বিদিশা অবৈধভাবে মেজর সিকদার আনিসুর রহমান, দয়াল কুমার বড়ুয়া গংদের সঙ্গে নিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে অবৈধ অসামাজিক কার্যকলাপ, সরকার বিরোধী কার্যক্রম, ভুয়া পদ বাণিজ্য, পদ দেয়ার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনকে এনে নির্যাতন ও অস্ত্রের হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ রাখেন বিদিশা সিদ্দিক।
এদিকে, বিদিশার ব্যক্তিগত সহকারী গোলাম মোস্তফা বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্র। ম্যাডামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রা/অ