শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:২৮ pm
ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক : রাজশাহীর আমের খ্যাতি ছড়িয়ে আছে দেশ থেকে সারা বিশ্বে। এ অঞ্চলে বিখ্যাত ফজলি, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাত, লক্ষণভোগ ল্যাংড়া, আম্রপালি ও আশ্বিনাসহ নানা প্রজাতির ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে রাজশাহীতে আমচাষ বেশী লাভজনক হওয়ায় বেশিরভাগ চাষী এখন উন্নত জাতের আম বাগান তৈরি করছেন।
তবে গত দুই বছর থেকে নতুন জাতের এই বারোমাসি আম চাষ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে, একদম নতুন জাতের আম হওয়ায় বর্তমানে রাজশাহীর ৯ হেক্টর জমিতে কাটিমন আমের চাষ হচ্ছে।
রাজশাহীর পুঠিয়া, চারঘাট, বাঘা উপজেলার চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমের মৌসুমে সকল জাতের আম বাজারে আসে। তবে কাটিমন জাতের আম মৌসুম ছাড়াও বাকি সময়ে পর্যাপ্ত পরিমান গাছে ধরে। এতে চাষীদের লাভের পরিমান কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছাঃ উম্মে ছালমা বলেন,‘গত দুই বছর থেকে রাজশাহী জেলার কয়েকটি উপজেলায় ৯ হেক্টর জমিতে বানিজিক ভাবে কাটিমন জাতের বারোমাসি আম চাষ করা হচ্ছে। আমের বাগান গুলোতে নিয়মিত পরিচর্যা করায় আশানুরুপ আম পাওয়া যাচ্ছে। মৌসুম বাদে আম ধরায় মৌসুমের চেয়ে কয়েকগুন বেশী দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে এ বছর স্থানীয় চাষিদের আগ্রহ অনেক বেশী দেখা যাচ্ছে। চাষিরা এবার বানিজিক ভাবে বাগান করতে প্রাথমিক ভাবে জমি নির্বাচন করেছেন’।
পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের কানাইপাড়া গ্রামের আমচাষি শাখাওয়াত হোসেন মুন্সি বলেন,‘প্রায় প্রতিবছরই নতুন জাতের আমের জাত বাজারে আসছে। তবে এই অঞ্চলের চাষিরা আমের গুনগত মান যাচাই করেই বাগান তৈরি করেন। সে হিসাবে কাটিমন আম খুবই সুস্বাদু ও আঁশবিহীন। আর সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করতে পারলে মৌসুম ছাড়াও বছরে আরো দুইবার আম ধরছে। যার কারনে গত বছর থেকেই অনেক চাষিরা বারোমাসি এই কাটিমন জাতের আম বাগান করতে বেশী আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘এবার ব্যাক্তিগত ও বিভিন্ন নার্সারিতে কাটিমন জাতের আমের চারা পর্যাপ্ত উৎপাদন করা হচ্ছে। চারার বিক্রি বেড়েছে’।
একই উপজেলার জিউপাড়া গ্রামে কাটিমন আম চাষি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, গত বছর প্রায় দুই একর জমিতে কাটিমন জাতের আমের চারা রোপন করা হয়েছে। এ বছর মৌসুম বাদে বেশীরভাগ গাছে কয়েকটি করে আম এসেছে। পরে গাছ গুলোতে নতুন ভাবে মুকুলও এসেছে। বর্তমানে কাটিমন আম ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে’।
এই চাষী আরো বলেন,‘বাজারে কাটিমন জাতের আমের চাহিদা অনেক। সেই সাথে এই আমের বাগান করতেও অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন। বর্তমানে আমার ব্যাক্তিগত নার্সারিতে কয়েক হাজার কাটিমন জাতের চারা তৈরি করা হচ্ছে। চারা গুলো এবার নিজেস্ব জমিতে রোপন করা হবে। আর বাকি চারা গুলো পরিচিত কয়েকজন কিনতে চেয়েছেন’।
চারা উৎপাদনকারী খালেদ হোসেন বলেন,‘আমার নার্সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫ লাখ আমের চারা রয়েছে। এরমধ্যে কাটিমন জাতের চারা আছে প্রায় ৫০ হাজার। তবে গত মাসেই কাটিমন জাতের সকল আমের চারা বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে প্রতিটি কাটিমন আমের চারা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক শামসুল হক জানান, আমি রাজশাহীতে দায়িত্বে থাকাকালীন এই আমের কার্যক্রম শুরু হয়। এটা বিদেশি জাতের আম। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের আম এটা। এ অঞ্চলের একটি লাভজনক ও বানিজিক ফসল। এরমধ্যে বারোমাসি কাটিমন জাতের নতুন এই আম স্থানীয় চাষিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এই আম সিজন ও আনসিজনে সমপরিমান ধরে। এর স্বাদ ও গুনগত মানও খুবই ভালো। আশা করা যায় কাটিমন আমের চাষ ব্যাপক বিস্তর ঘটবে’।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলীম উদ্দীন জানান,‘এটা বারি-১১ জাতের বিদেশী আম। নতুন ভাবে থাইল্যান্ড থেকে আনা বারোমাসি আম। দুই বছর থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে এই আম চাষ হচ্ছে। আমাদের ফল গবেষণা কেন্দ্রে এই জাতের আমের কয়েকটি গাছ রয়েছে। মৌসুম বাদের অন-মৌসুমে বেশ কিছু আম পাওয়া যাচ্ছে। বারোমাসি জাত হওয়ায় বেশি দামে কৃষক বিক্রি করতে পারবে’। তিনি আরো জানান, এখন গাছ গুলো ছোট আছে। গাছ আরো বড় হলে এর ফলাফল সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। আজকের তানোর