শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:৩৭ pm
ডেস্ক রির্পোট : সব বয়সি শত শত শিশু-কিশোর ও নারীকে বিনাপারিশ্রমিকেই প্রায় ১৫ বছর ধরে কুরআন শরিফ শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন জামেলা খাতুন (৩০) নামে এক নারী। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্কুল থেকে একদিন বাড়ি ফেরার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন জামেলা খাতুন। রাত পার হওয়ার পর হাত-পা বাঁকা হয়ে যায় তার। দিনমজুর বাবা অভাবের কারণে মেয়েকে ভালো চিকিৎসাও দিতে পারেননি। একটা সময় শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন জামেলা।
ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকলেও আর কখনও স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। এর মধ্যে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাবা জমশের আলী প্রামাণিক। সংসারে জেঁকে বসে অভাব। কিন্তু দমে যাননি জামেলা। আল্লাহকে ভালোবেসে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে স্থানীয় এক হাফেজের কাছে পবিত্র কুরআন শরিফ পড়া শেখেন জামেলা। কিছু দিনের মধ্যেই পুরোটা শিখে ফেলার পর গ্রামের সব বয়সি শত শত শিশু-কিশোর ও নারীকে বিনাপারিশ্রমিকে প্রায় ১৫ বছর ধরে কুরআন শরিফ শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন বছর ত্রিশের এ নারী।
সংসার চলে কীভাবে, ঘরে বাজার আছে কিনা এসব কোনো চিন্তা না করে প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকাল হলেই পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের ডেফলচড়া গ্রামে জামেলার জরাজীর্ণ টিনের ঘরের সামনের উঠোনে ভিড় জমান শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ। কুরআন শরিফের বিভিন্ন সুরা ও আয়াতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক। একজন নারী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও যেভাবে দিনের পর দিন জামেলা পবিত্র কুরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন তা দেখে স্থানীয়রাও মুগ্ধ!
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, জামেলার বাবা ছিলেন দিনমজুর। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু দিন আগে মারা যান তিনি। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে জামেলা চতুর্থ। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। একমাত্র ভাই আলহাজ প্রামাণিকও খুব মেধাবী ছাত্র। দিনমজুরি করে এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তি হলেও পড়াশোনা হয়ে ওঠেনি টাকার অভাবে। কলেজ পড়ুয়া আলহাজের পরিচয় এখন সে দিনমজুর। মা জয়গুন খাতুনও অসুস্থ।
জামেলার ঘরের সামনের উঠোনে বসে রোজ পাড়া-প্রতিবেশীসহ আশপাশের সববয়সি মানুষের ভিড় জমে পবিত্র কুরআন শিক্ষায়। এর জন্য কেউ কোনো টাকা দিতে চাইলেও নেন না জামেলা। টিউবওয়েল চাপতে পারেন না, তাই অজু করার পানির জন্য অপেক্ষায় থাকেন যে, কখন কে পানি এনে দেবে? শুধু তাই নয়, দরিদ্রতাও বড় সমস্যা জামেলার। তবু এ পর্যন্ত শতাধিক শিশু-কিশোর ও নারীর হাতে পবিত্র কুরআন শরিফ তুলে দিয়েছেন জামেলা।
জামেলার কাছে কুরআন শিক্ষাগ্রহণ করা ষাটোর্ধ্ব নারী সোনাভান খাতুন যুগান্তরকে বলেন, ছোটবেলায় কুরআন শরিফ পড়া শিখেছিলাম। কিন্তু পরে ভুলে গেছি। জামেলার কাছে শিখে এখন কুরআন শরিফ পড়তে পারি। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও মেয়েটা যেভাবে শেখায় তাতে মুগ্ধ হয়েছি। এর জন্য জামেলা কোনো টাকা-পয়সাও নেয় না।
রাজিয়া খাতুন নামে অপর এক নারী যুগান্তরকে জানান, মেয়েটার পরিবার খুব অভাবী। এ পর্যন্ত অনেক মানুষকে পবিত্র কুরআন শরিফ পড়া শিখিয়েছে জামেলা। শত অভাবের মাঝেও টাকা-পয়সার প্রতি কোনো চাহিদা নেই মেয়েটির। টাকা দিতে চাইলেও নেয় না।
নিজের এ কাজ নিয়ে জামেলা খাতুন প্রতিবেদককে বলেন, সবাই আল্লাহর পথে চলুক। এ দুনিয়াতে মানুষ চিরদিন থাকবে না। মহান আল্লাহতায়ালার অতিপছন্দ ও তাকে সন্তুষ্টি করতে পবিত্র কুরআন পাঠের কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে হাদিসে পাকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ আল্লাহ আমাকে হেকমত দিয়েছেন। তাই শতকষ্টের মাঝেও কুরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে হান্ডিয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, জামেলা নামে ওই মেয়েটির কথা শুনেছি। পরিবারটি খুবই অসহায়। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও মেয়েটি যেভাবে শত শত মানুষকে কুরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন, এর চাইতে উত্তম কাজ আর কিছু নেই। এর প্রতিদান অবশ্যই পাবেন তিনি। আজকের তানোর