শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:০১ pm
ডেস্ক রির্পোট : আসপিয়া ইসলাম কাজল যাতে তার যোগ্যতায় পুলিশ কনস্টবল পদে চাকরি পেতে পারে সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ভূমিহীন আসপিয়া ইসলাম কাজলের বাবা ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার বাসিন্দা হলেও বাড়ি থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে স্ব-পরিবারে তারা বরিশালের হিজলা উপজেলায় এসে বসবাস শুরু করেন।
সূত্রমতে, ভূমিহীন হওয়ায় চাকরি পাচ্ছেন না আসপিয়া এ সংক্রান্ত একটি লেখা ও ছবি বৃহস্পতিবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আসপিয়ার কাছে ফোন আসতে শুরু করে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে ফোন করা হয়। সেখানে পুলিশ কনস্টবল পদে নিয়োগ পরীক্ষার রোল নম্বর থেকে শুরু করে সবধরনের তথ্য তাদের নিকট সরবরাহ করা হয়েছে। তারা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন বলে জানিয়েছেন আসপিয়াকে।
এছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন দপ্তর থেকে আসপিয়াকে ফোন করে তারাও সকল ঘটনা শুনে নিয়োগ পরীক্ষার সকল তথ্য নিয়েছেন। ফলে আসপিয়া তার চাকরি হওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখছেন বলে আজ শুক্রবার সকালে সংবাদকর্মীদের কাছে জানিয়েছেন।
কলেজ ছাত্রী আসপিয়া ইসলাম কাজলের জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, তিনি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নের খুন্না গোবিন্দপুর গ্রামের মাতুব্বর বাড়ির বাসিন্দা। তারা (আসপিয়া) স্বপরিবারে মাতুব্বর বাড়ির মেজবাহ উদ্দিন অপুর বাড়িতে থাকেন।
বড় জালিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ঝন্টু বেপারী বলেন, আসপিয়াকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। ওর বাবা সৎ মানুষ ছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ মে তার বাবা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আসপিয়াসহ তাদের পরিবারের চারজন সদস্য ওই এলাকার ভোটার। তার বাবাও ওই এলাকার ভোটার ছিলেন। আসপিয়ার বড় ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে এবং মেঝ বোন একটি রেস্তোরাঁয় বাবুর্চির কাজ করেন। আর সেজ আসপিয়া ইসলাম কাজল হিজলা ডিগ্রি কলেজে বিএ-তে পড়াশোনা করছেন। ছোট বোন পড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারা তাদের মা ঝর্না বেগমের সাথে হিজলায় বসবাস করছেন। তিনি আরও বলেন, শফিকুল ইসলাম জীবিত অবস্থায় আমার সাথে আলাপ করে হিজলায় জমি ক্রয় করে ঘর তোলার জন্য সবকিছু ঠিক করেছিলেন। এমনকি জমিও পছন্দ করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে সে মারা যাওয়ায় সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে।
আসপিয়া বলেন, কোন ধরনের তদবির কিংবা সুপারিশ ছাড়া নিজের যোগ্যতায় সাতটি স্তর সফলভাবে অতিক্রম করার পর নিয়োগপত্র পাওয়ার মুহুর্তে তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছিলো। যে সময়টা হিজলা থানার ওসি তাকে জানিয়েছেন তোমার পরিবারের নিজস্ব জমি নেই, তাই তোমার চাকরিটা হচ্ছেনা। এ কথা শোনার সাথে সাথে মনে হয়েছিল আমার মৃত্যু হচ্ছে। এ খবরটা তখন যে কতো কষ্টের ছিলো তা বোঝাতে পারবো না। কোন কিছু না ভেবে ছুটে যাই ডিআইজি স্যারের কাছে। সেও তার অপারগতার বিষয়টি তুলে ধরেন।
যোগ্যতা থাকার পরেও ভূমিহীনরা চাকরি পাবেনা পুলিশের এমন নিয়ম পরিবর্তনের দাবি করেছেন, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) জেলার সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা। জেলা প্রশাসক মোঃ জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও ভূমি না থাকায় কারো চাকরি না হওয়া দুঃখজনক। তাই আসপিয়ার পরিবারকে হিজলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে জমিসহ ঘর তথা একটি স্থায়ী ঠিকানার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, পুলিশ কনস্টবল পদে সফলভাবে ছয়টি স্তর পার হয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চমস্থানে রয়েছে আসপিয়া। সবশেষ গত ২৯ নবেম্বর ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন সেন্ট্রাল হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষায়ও আসপিয়া উত্তীর্ন হয়। চূড়ান্ত নিয়োগের পূর্বে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করা হয়। এতে করে আসপিয়া ইসলাম কাজলের চাকরির স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। সূত্র : এফএনএস