শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৫০ pm
ডেস্ক রির্পোট : রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় মাছির কামড়জনিত রোগে মারা গেছে বাঘের দুই শাবক দুর্জয় ও অবন্তিকা। ২০ ও ২১ নভেম্বর এরা মারা যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা ও অযত্ন-অবহেলাই এ মৃত্যুর কারণ।
এ সম্পর্কে রোববার দুপুরে কথা বলেছেন জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. মোহাম্মদ আবদুল লতিফ। তিনি জানান, যেখানে বাতাস ঢুকতে পারে, সেখানে মশা-মাছি প্রবেশ করতে পারে। এটি একটি বড় সমস্যা। মাছি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এছাড়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে, সেটসি ফ্লাই নামে এক ধরনের মাছির কামড়ে ট্রাইপেনোসোমা রোগে এদের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রধান পরিচালক (প্রশাসন) ডা. দেবাশীষকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন-মাছিবাহিত পরজীবী রোগে যদি বাঘ শাবকের মৃত্যু হয়, তাহলে মাছি নিধনে কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ? এর আগেও যদি একই রোগে শাবক মারা যায়, তাহলে এতদিন মাছিবাহী রোগ থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? এ বিষয়ে ডা. আব্দুল লতিফ জানান, মাছি থেকে মুক্ত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খাঁচা তৈরি করাসহ মাছি নিধনে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ২৬ মে জন্ম হয়েছিল বাঘ শাবক এ ভাইবোনের। থাকত মা বেলি ও বাবা টগরের সঙ্গে একই খাঁচায়। এর আগে ১৬ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এদের নামকরণ, নিবন্ধন ও দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত করেন। ওই সময় এদের প্রতি বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মন্ত্রী। খাঁচায় উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল শাবক দুটিকে ঘিরে। বিশেষ করে শিশুরা তাকিয়ে থাকত এদের দিকে। অনেক সময় বাঘ মা-বাবা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও খুদে দুই শাবক খাঁচা ঘেঁষে খেলা করত।
ডা. আবদুল লতিফ জানান, শাবক দুটির মৃত্যুতে আমরাও শোকাহত। ভাবতেই পারছি না, ফুটফুটে দুর্জয়-অবন্তিকা এভাবে চলে যাবে। ৬ মাসে প্রায় ২৫ কেজি ওজন হয়েছিল। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি। ১৫ নভেম্বর খুঁড়িয়ে হাঁটা দেখে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা চিকিৎসকের পরামর্শে এদের আইসোলেশনে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। ১৯ নভেম্বর এদের শরীর বেশ দুর্বল হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ডেকেছি-চিকিৎসকরা বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরীক্ষায় রক্তে মাছিবাহিত পরজীবী ধরা পড়ে।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকেও একজন চিকিৎসককে যুক্ত করে চিড়িয়াখানায় একের পর এক মেডিকেল বোর্ড বসানো হয়। কিন্তু বেলি ও টগরের প্রথম শাবক দুটি মারা যায়। বাঘ মা-বাবার চোখে মুখে শোকের ছায়া এখনো স্পষ্ট। আমরা বেলিকে আলাদা রেখেছি। বিশেষভাবে দেখভাল করছি। আশা করছি, এরা আবারও বাচ্চা দেবে। আমরা সেই পরিবেশ সৃষ্টি করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গবেষক জানান, তিনি একসময় চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা ছিলেন। প্রাণীদের জীবনাচার বুঝতে নানা দিক থেকে বিশ্লেষণ করতে হয়। এজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। বাঘ শাবক দুটিকে হাসপাতালে না নিয়ে চিড়িয়খানার খাঁচায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হয়। এতে অসুস্থের ৯ দিনের মধ্যেই মারা যায় এরা। প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়লে নয়-অসুস্থ হওয়ার আগেই যথাযথ নজর রাখতে হয়। নিয়মিত চিকিৎসার আওতায় রাখতে হয়। সেটি নামমাত্র যেন না হয়, যথাযথভাবে করতে হয়, যা জাতীয় চিড়িয়াখানায় অনুপস্থিত। সূত্র : যুগান্তর